গতকালই শেষ হল বর্ষার প্রথম মাস জুন | দেখে নেওয়া যাক কেমন গেল পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার প্রথম মাসের হাল হকিকত | জুন মাসে দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের পার্বত্য এবং সংলগ্ন পাদদেশিও জেলাগুলি ছাড়া প্রায় সর্বত্রই বর্ষার ঘাটতি লক্ষণীয় | সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বর্ষার ঘাটতি এবং বৃষ্টিপাত দুটোই লক্ষ্য করা হচ্ছে উত্তরবঙ্গ ও সংলগ্ন অঞ্চলে | উত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলায় স্বাভাবিক হচ্ছে প্রায় ১২৫% বেশি বৃষ্টিপাত লক্ষ্য করা হয়েছে যেখানে মুর্শিদাবাদ জেলায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৫% কম বৃষ্টিপাত হয়েছে | এই বিপুল ঘাটতির পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে বর্ষার দেরি করে পশ্চিমবঙ্গে আগমন এবং কোন সক্রিয় মৌসুমী সিস্টেমের বঙ্গোপসাগরে না তৈরি হওয়া | তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে রেমালের এর প্রভাবে উত্তরবঙ্গের পার্বত্য এবং সংলগ্ন অঞ্চলে বর্ষার আগমন ঘটে ৩১শে মে নাগাদ এবং তারপর থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ বর্ষা উত্তরবঙ্গে আটকে থাকে এবং তারপরে অবশেষে ১২ই মে নাগাদ কলকাতা এবং সংলগ্ন বাংলাদেশ লাগওয়া জেলা গুলিতে বর্ষার আগমন ঘটে | এরপরে বর্ষার গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে প্রবেশ করতে ২৮ শে জুন হয়ে যায় | বর্ষা এত দেরি করে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের প্রবেশ ঘটেছিল ২০০৯ সালে এবং তার আগে ঘটেছিল ১৯৭৬ সালে | এর মূল কারণ সমগ্র জুন মাসের প্রায় শেষ অব্দি বঙ্গোপসাগরে কোন নিম্নচাপের তৈরি না হওয়া। জুন মাসের প্রায় শেষ অব্দি কলকাতায় বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিক থেকে ৭৫ শতাংশ কম ছিল যা জুনের শেষে একটি নিম্নচাপের জন্য বেড়ে গিয়ে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়ায় তবে তা পুরোপুরি ভাবে পশ্চিমবঙ্গের ঘাটতি মেটাতে অক্ষম হয় | মাসের শেষে পশ্চিমবঙ্গের জুন মাসের ভিত্তিতে সর্বত্র ঘাটতি থেকে যায় ১৯ শতাংশ |
সাধারণত পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার প্রধান কারণ নিম্নচাপ অক্ষরেখা এবং মৌসুমী বায়ুর তাতারি আগমনের জন্য ঘটে | তবে সমগ্র জুন মাসে তা না হওয়ার জন্য এবং জুনের প্রথম সপ্তাহে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আর্দ্র তাপপ্রবাহের জন্য এই পরিমাণ ঘাটতি থেকে যায় যদিও উত্তরবঙ্গে বর্ষা আটকে থাকায় সেখানে বিপুল পরিমাণে বৃষ্টি হয় যার জন্য আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলা গুলিতে স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয় এবং বাকি দার্জিলিং এবং সংলগ্ন পার্বত্য অঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় এবং জলঢাকা নদীর কিছু কিছু অংশ প্লাবিত হয় | এই বিপুল পরিমাণ ঘাটতি যদিও পুরোপুরিভাবে মেটা নাও সম্ভব হতে পারে তবে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরের একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে এবং তার ফলে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণের দিকে জেলাগুরি অর্থাৎ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে যার ফলে কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বৃষ্টির অবস্থা যা কৃষি প্রধান অঞ্চল অর্থাৎ বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি, নদীয়া ইত্যাদি অঞ্চলের সাহায্য করতে পারে | জুলাই মাসের শেষে হোক দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে যার ফলে বর্ষার পরিমাণ বাড়তে পারে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে তবে কতটা কি বৃষ্টি হবে সেটা লক্ষণীয় |
আবহাওয়া সংক্রান্ত আরো সঠিক তথ্য সময় মত পেতে জুড়ে থাকুন আমাদের সাথে |
No comments:
Post a Comment