১) সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা: সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। গড় সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা ২৬°সেলসিয়াস ও তার বেশি হলে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়। এবার দেখা উচিত এই ২৬°সে তাপমাত্রার তুলনায় যে সমস্ত অঞ্চলে তুলনামূলক বেশি সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা থাকবে সেখানেই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের নিম্নাঞ্চলে ০° থেকে ১০°উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি রয়েছে এবং দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি রয়েছে তাই দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় নিম্নচাপ সৃষ্টি ও তার শক্তিবৃদ্ধি হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
উইণ্ড শেয়ার: ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি ও সুগঠিত হবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে উইণ্ড শেয়ার। উইণ্ড শেয়ার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে প্রথমত অনুভূমিক উইণ্ড শেয়ার এবং উলম্ব উইণ্ড শেয়ার। এই উইণ্ড শেয়ার কম থাকলে ঘূর্ণিঝড় ক্রমশ সুগঠিত হয়ে থাকে। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের ০° থেকে ১০° উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে উইণ্ড শেয়ার ১০ থেকে ২০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় বিস্তৃত হয়েছে বিশেষত দক্ষিণ মধ্য, দক্ষিণ পশ্চিম ও দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগরে উইণ্ড শেয়ার সবচেয়ে কম।
ম্যাডেন জুলিয়ান অসিলেশন: ম্যাডেন জুলিয়ান অসিলেশন বঙ্গোপসাগরে ক্রান্তীয় অস্থিরতা তৈরির জন্য ও হাই কনভেকটিভ অ্যাকটিভিটিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে এম জে ও ফেজ ৫ এ অবস্থান করছে যা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ফেজ ৩ এ অগ্রসর হবে অ্যাম্প্লিচিউড ১ বা তার বেশি হিসেবে যার জন্য আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে।
অনুকূল সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা, উইণ্ড শেয়ার, অনুকূল এম জে ও এর পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় ট্রপিক্যাল সাইক্লোন হিট পোটেনশিয়াল এনার্জি যথেষ্ট পরিমাণে থাকায় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা বাড়ছে। মাল্টিমডেল এনসেমবেল দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ ইণ্ডিকেট করছে।
মে মাসের ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ: মে মাস হলো এমন একটি মাস যেখানে আপার ট্রপোস্ফিয়ারিক লেভেলের খুব অস্থিরতা ও দ্রুত পরিবর্তন হবার সম্ভাবনা থাকে। তবে ১৯৬০ সাল থেকে ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে মে মাসের প্রথম দিকে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দিকে অগ্রসর হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এর পাশাপাশি মে মাসের শেষ ১৫ দিনের মধ্যে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ভারতের পূর্ব উপকূলে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেক্ষেত্রে উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ের উচ্চ ঝুঁকিতে অবস্থান করে। এখন দেখার বিষয় বঙ্গোপসাগরে আসন্ন ঝড়ের অভিমুখ কোনদিকে থাকে এবিষয়ে ওয়েদার অফ ওয়েস্টবেঙ্গল দিবারাত্রি পর্যালোচনা করে চলেছে। আপাতত মে মাসের শেষ ১৫ দিনের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে ক্রান্তীয় নিম্নচাপ সৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে। আসন্ন ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সবার আগে খবর পেতে ফলো করুন ওয়েদার অফ ওয়েস্টবেঙ্গল।
৯ই মে ২০২৪
No comments:
Post a Comment