নীলকান্ত মণির মতোই রহস্যময় ঘূর্ণিঝড় ফাইলিন। অষ্টমীর দিন এক লহমায় লণ্ডভণ্ড বঙ্গ ও ওড়িশা।। - Weather of West Bengal

My weather, my bengal.

Sunday, August 04, 2024

নীলকান্ত মণির মতোই রহস্যময় ঘূর্ণিঝড় ফাইলিন। অষ্টমীর দিন এক লহমায় লণ্ডভণ্ড বঙ্গ ও ওড়িশা।।

নিজস্ব সংবাদদাতা: সালটা ২০১৩ সে বছরেও দশ থেকে ১৫ই অক্টোবরের মধ্যে পড়েছিল বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা এদিকে দুর্গাপূজা নিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখার মত। ধীরে ধীরে চলে এলো মহালয়ার সময় আর ২০১৩ সালে‌ মহালয়া পড়েছিল ৭ই অক্টোবর এদিকে তখনো বাঙালি টের পায়নি দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন ঠিক কি দুর্যোগ আসতে চলেছে মহালয়ার দিনেই পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে তৈরি হলো নিম্নচাপ যা গভীর নিম্নচাপ হিসাবে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে শুরু করল এদিকে গাল্ফ অফ থাইল্যান্ড পেরিয়ে ৭ই অক্টোবর পড়লো আন্দামান সাগরে এই আন্দামান সাগরে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড় ফাইলিনে পরিণত হলো। এই ফাইলিন পরবর্তী 48 ঘণ্টার মধ্যে আরও শক্তিশালী হয়ে প্রায় সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছিল। এবং 12 ই অক্টোবর ২০১৩ মহা অষ্টমীর দিন রাতে উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হেনেছিল এই ফাইলিন ছিল এমন একটি ঘূর্ণিঝড়। যা বিগত ১০ বছরে দুর্গাপুজোকে সরাসরি প্রভাব ফেলেছিল। ঘূর্ণিঝড় ফাইলিন ছিল এমন একটি ঘূর্ণিঝড় যা স্থলভাগ অতিক্রমের ২৪ ঘন্টা আগে পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের আকাশকে পরিষ্কার রেখেছিল। অর্থাৎ ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছিল অষ্টমীর দিন ১২ ই অক্টোবর ১১ অক্টোবর সপ্তমীর দিনেও আকাশ ছিল পরিষ্কার। সপ্তমীর দিন রাত থেকে মেঘ ঢুকতে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকার উপর এবং অষ্টমীর দিন সকাল থেকেই শুরু হয় উপকূলীয় এলাকায় ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডব। এবং অষ্টমীর দিন যত বেলা গড়াতে থাকে আবহাওয়া ততই খারাপ হতে থাকে যার রেস চলে নবমী পর্যন্ত এবং দশমীতে বৃষ্টি হয় দক্ষিণবঙ্গে ঘূর্ণিঝড় ফাইলিন ছিল এমন একটি ঘূর্ণিঝড় যা স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পরের ৬ ঘন্টা পর্যন্ত সমশক্তি নিয়ে অর্থাৎ বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় হিসাবে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় ফাইলিন ছিল এক রহস্যময় ঘূর্ণিঝড় কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গ এবং উড়িষ্যা কে তছনছ করে দিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় ফাইলিন। যদিও এক চুল এদিক ওদিকের জন্য ঘূর্ণিঝড়টি উড়িষ্যায় গেছে না হলে ঝড়টি সরাসরি পশ্চিমবঙ্গে আঘাত করার সম্ভাবনা ছিল। এ বিষয়ে ওয়েদার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের কর্ণধার প্রসূন ঘোষ মনে করেন পোস্ট মনসুন ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে বা মৌসুমী পরবর্তী ঘূর্ণিঝড় এর ক্ষেত্রে মায়ানমারের কাছে থাকা উচ্চচাপ বলয় বা সাবট্রপিক্যাল রিজের অবস্থান কার্যকরী ভূমিকা, গ্রহণ করে ঘূর্ণিঝড় কোথায়? আঘাত হানবে তার ওপর প্রসুন ঘোষ মনে করেন ঘূর্ণিঝড় ফাইলিনের ক্ষেত্রে সাব ট্রপিক্যাল রিজ বা উচ্চচাপ বলয় যেটা পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর ও তৎসংলগ্ন মায়ানমারের ওপর অবস্থান করে তা স্বাভাবিকের চেয়ে পশ্চিম দিকে সরে এসেছিল যার জন্য ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিমবঙ্গের জায়গায় উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড়টি যদি উচ্চচাপ বলয়ের দ্বারা কম প্রভাবিত হতো বা উচ্চচাপ বলয় আরো পূর্ব দিকে থাকতো সেক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানতো এবং তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতো পশ্চিমবঙ্গে মেটিওরা ওয়েদার সার্ভিসের কর্ণধার প্রসূন ঘোষ এটাও মনে করেন সাধারণত বর্ষা বিদায় সমগ্র ভারত থেকে একেবারে হয় না প্রথমত উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে বর্ষা বিদায় নেয়া শুরু করে এবং পরবর্তী পর্যায়ে মধ্যভারত ও পূর্ব ভারত থেকে বর্ষা বিদায় নেওয়া হয় এই পশ্চিম ভারত থেকে বর্ষা বিদায় নেওয়া এবং পূর্ব ভারত থেকে বর্ষা বিদায় নেওয়ার মধ্যে বেশ কিছুদিন স্থবিরতা বিরাজ করে ঘূর্ণিঝড় ফাইলিন এমন একটা সময় তৈরি হয়েছিল। যখন মধ্য ভারত ও পূর্ব ভারত থেকে বর্ষা বিদায় নেয়নি এবং বঙ্গোপসাগরের বৃহদ অঞ্চল থেকে বর্ষা বিদায় নেয়নি এদিকে বর্ষা প্রত্যাগমন করতে শুরু হওয়ায় পূবালী বাতাসের তীব্রতা অনেকটাই সাগর থেকে কমে গিয়েছিল। এবং যার জন্য ঘূর্ণিঝড় ফাইলিন অনেক সুগঠিত এবং বড় ডায়ামিটার যুক্ত হয়েছিল যার জন্য উড়িষ্যায় আঘাত হানলেও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের ক্লাউড ব্যান্ডের প্রভাবে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছিল। সব থেকে বড় কথা এই ঘূর্ণিঝড়টি অষ্টমীর দিন আছে পড়েছিল ঠিকই কিন্তু সপ্তমীর দিনেও বোঝা যায়নি এত বড় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত আনতে চলেছে। তার কারণ হিসাবে ওয়েদার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের আবহবিদ ত্রিনাঙ্কুর ঘোষ মনে করেন এই ঘূর্ণিঝড়টি যত শক্তি বাড়িয়েছে তার ডায়ামিটার অনেক বড় হয়েছে ঠিকই সমুদ্রে থাকাকালীন ঘূর্ণিঝড়টি চারপাশ থেকে অর্থাৎ স্থলভাগ থেকে মেঘ ও জলীয় বাষ্প নিজের কেন্দ্রের দিকে কেন্দ্রীভূত করেছে যার জন্য স্থলভাগে থাকা মৌসুমী বায়ু দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং সমুদ্রের উপর মৌসুমী বায়ু যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়কে যথেষ্ট পরিমাণ পোটেন্সিয়াল এনার্জি দিয়েছে যার জন্য ঘূর্ণিঝড়টি অতিমাত্রায় স্বল্প সময়ের মধ্যে শক্তিশালী হয়ে পড়েছে। ওয়েদার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের অন্যতম আবহবিদ দেবজিৎ মজুমদার এর মতে ঘূর্ণিঝড়টি সমুদ্রের ওপর দীর্ঘ পথ অতিক্রম করায় ঘূর্ণিঝড়টির শক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য মৌসুমী সিজনে বা বর্ষা আসার সময় বা বর্ষা চলাকালীন বঙ্গোপসাগরের একটা বড় অঞ্চলে বাতাসের গতি যথেষ্ট বেশি থাকে, যার জন্য যতই সুদীর্ঘ জলপথ অতিক্রম করুক না কেন নিম্নচাপটি শক্তি বাড়াতে পারে না এবং খুব তাড়াতাড়ি স্থলভাগে প্রবেশ করে কিন্তু মৌসুমী উত্তর পর্যায়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বাতাসের গতি অনেকটাই কমে আসে। বঙ্গোপসাগরের একটা বড় অঞ্চল জুড়ে বাতাসের সম্মেলন দেখা যায় যার জন্য ঘূর্ণিঝড় যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে এ বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়ার কারণ নেই সর্বোপরি বলা যায় ঘূর্ণিঝড় ফাইলিন শক্তির দিক থেকে এবং সময়ের দিক থেকে এক অনন্য নজির রেখেছে পশ্চিমবঙ্গ উড়িষ্যায় এবং ক্ষয়ক্ষতি ও তাণ্ডবের দিক থেকেও বড় বড় ঘূর্ণিঝড়ের দলে নিজের জায়গা করে নিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ফাইলিনের আছড়ে পড়ার সময় গতি ছিল ঘন্টায় ২০০ কিলোমিটার থেকে ২২০ কিলোমিটার যা বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ও সুপার ঘূর্ণিঝড়ের অন্তর্বর্তী পর্যায় হিসাবে স্থলভাগ অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড় ফাইলিন নামকরণ করেছে থাইল্যান্ড যার অর্থ হল নীলকান্ত মনি বা নীলা। নীলা যেমন রহস্যময় পাথর তেমনি ঘূর্ণিঝড় ফাইলিন ছিল এক রহস্যময় ঘূর্ণিঝড় যা ২০১৩ সালের ১২ ই অক্টোবর আছড়ে পড়ে উড়িষ্যা উপকূলে। ২০২৪ সালেও দুর্গাপুজো 12 ই অক্টোবর রয়েছে‌ ১০ থেকে ১৫ই অক্টোবর মৌসুমী বায়ু প্রত্যাগমন ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির চূড়ান্ত ঋতু হিসাবে গণ্য হয় তাই এই সময় বঙ্গোপসাগর তৈরি করে বড় বড় ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে ২০২৪ সালেও ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা থাকছে দুর্গাপুজোর সময়। 
Weather of West Bengal 
4th August 2024

No comments:

Post a Comment