নিজস্ব সংবাদদাতা: ঋতুচক্রের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ঋতু হলো শরৎ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অভূতপূর্ব দৃশ্যপট তৈরি করে থাকে শরৎকাল। সাধারণভাবে বর্ষাকাল থেকে শরৎকালে রূপান্তরের মধ্যে এতটাই পরিবর্তন চোখে পড়ে ও সৌন্দর্য চোখে পড়ে যার জন্য ঋতুরাজ বসন্তের পাশাপাশি ঋতু রানী হিসাবে শরতের আগমন ঘটে যেহেতু শরৎকালকে ঋতুরানী হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাই সব থেকে সুন্দর ঋতু হিসাবে শরৎকালকেই বিবেচনা করা হয়। এদিকে শরৎকালে নীল আকাশে পেঁজা তুলার মত মেঘেদের দল, নানা ধরনের মেঘ বৈচিত্র্যের পাশাপাশি শরতের সোনাঝরা রোদে দীপ্ত হয়ে ওঠে শরৎকাল। এছাড়াও শরৎকালে শুরু হয় বর্ষা বিদায় পর্ব। এই বর্ষা বিদায় পর্ব একদিনে ঘটে না ধীরে ধীরে উত্তর-পশ্চিম ভারত মধ্য ভারত এবং সবশেষে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ থেকে বর্ষা বিদায় নেয় শুরু হয় হেমন্তের সূচনা। এদিকে ভাদ্র ও আশ্বিন মাস মূলত শরৎকাল হিসাবে পশ্চিমবঙ্গে তকমা পায় আশ্বিন মাস যেমন পূজোর মাস তেমনি আশ্বিন মাস পড়া থেকে। শুরু হয়ে যায় বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরের ঘূর্ণিঝড়ের আগমনবার্তা। মূলত ঋতু পরিবর্তনের কারণে বঙ্গোপসাগরে বায়ুর চাপ ও বাতাসের গতি অনেকখানি কমে যায়। এদিকে ততক্ষণে উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে বর্ষা বিদায় নেওয়া শুরু করেছে। এবং ধীরে ধীরে মধ্য ভারত সহ পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে বর্ষা বিদায় পটভূমি তৈরি হচ্ছে। আন্তঃক্রান্তীয় অভিসরণ অঞ্চল যাকে ITCZ বলা হয়ে থাকে এই অঞ্চলটি দক্ষিণ দিকে অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরে নীচের দিকে নেমে আসে। এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে তা ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। তার কারণ বঙ্গোপসাগরের নিচের দিকে জলতল তাপমাত্রা ও উইণ্ড শেয়ার অনেকটাই কম থাকে এবং যেহেতু আন্তঃক্রান্তীয় অভিসরণ অঞ্চল বঙ্গোপসাগরে নিচের দিকে নেমে আসে তাই এই অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ গুলো সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে আশ্বিন মাসের শুরুতে মৌসুমী অক্ষরেখাটি ভেঙে যায় এবং ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় যার কারণে আন্ত ক্রান্তীয় অভিসরণ অঞ্চলটি সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগরের নীচের দিকে নিম্নচাপ সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এই নিম্নচাপ গুলি বর্ষাকালে নিম্নচাপের মত খুব দ্রুতগামী হয় না বরং উইণ্ড শেয়ার কম থাকার জন্য ও উত্তর পশ্চিম ভারতে উচ্চচাপ বলয় সক্রিয় হওয়ার জন্য ধীরগতির হয়ে থাকে এবং বঙ্গোপসাগরে অনুকূল পরিবেশ থাকায় তা দ্রুত শক্তি বাড়ায় এবং অনেকটা পথ অতিক্রম করে তাই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে থাকে আশ্বিন মাসের নিম্নচাপ গুলি থেকে। ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে দেখা যায় আশ্বিন মাসে বেশ বড় বড় ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ২০১৩ সালে তৈরি হওয়া উড়িষ্যাগামী ঘূর্ণিঝড় ফাইলিন। ২০১৪ সালে তৈরি হওয়া অন্ধ্রপ্রদেশগামী ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ ২০১৮ সালে তৈরি হওয়া অন্ধপ্রদেশগামী ঘূর্ণিঝড় তিতলি। এরকম অজস্র উদাহরণ আছে আশ্বিন মাসে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের। সবথেকে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল আশ্বিন মাসে এবং তা পশ্চিমবঙ্গেও এসেছিল তা হল ১৭৩৭ সালে তৈরি হওয়া সুপার সাইক্লোন দ্য গ্রেট কলকাতা ঘূর্ণিঝড়। প্রায় তিন লক্ষের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এই ঘূর্ণিঝড়ে। সামগ্রিকভাবে বলা যায় আশ্বিন মাস যেমন প্রকৃতির সব থেকে সুন্দর মাস তেমনই সবথেকে ভয় ও আতঙ্কের মাস হল আশ্বিন মাস আর এই আশ্বিন মাসেই ভয় ও আতঙ্কের বেশিরভাগ কারণ হলো বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের। এখন প্রশ্ন হল ২০২৪ সালে আশ্বিন মাসে দূর্গাপূজা পড়েছে ঠিক কতটা ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে এ কথা বলতে গেলে বলা যায় ২০২৪ সালে আশ্বিন মাসে যে সময় দুর্গাপুজো করেছে ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে প্রায় ১৭৩৭ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ওই সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ৫ থেকে ১৫ই অক্টোবরের মধ্যে প্রায় ৯০টি ক্রান্তীয় সিস্টেম অর্থাৎ গভীর নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড় বা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল। যার মধ্যে ৪৪ টি ঘূর্ণিঝড় ক্যাটাগরির রূপ নেয়। এবং চারটি সিস্টেম সুপার সাইক্লোনের রূপ নেয়। তাই বলাই যায় ২০২৪ সালের দুর্গাপুজোর সময় ক্রান্তীয় সিস্টেম হবার সম্ভাবনা থাকছে। এছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরে লা নিনা সক্রিয় হচ্ছে এই লানিনা সক্রিয় হলে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের ও বঙ্গোপসাগরের জলতল তাপমাত্রা অন্যান্য বছরে তুলনায় অনেকটাই বেশি থাকে, যার জন্য পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ হবার ঝুঁকি আশ্বিন মাসে বা পুজোর সময় অনেকটাই বেশি থাকে। বিলম্বিত বর্ষা বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী ঘন ঘন সিস্টেম এবং অতিবৃষ্টি ঘটিয়ে থাকে। এই লানিনা পরিস্থিতি। সুতরাং এই লানিনা পরিস্থিতিতে পুজোর সময় ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা।
Weather of West Bengal
5/9/2024
No comments:
Post a Comment