এমনিতেই বর্ষার শেষে আশ্বিন মাসের প্রথমে দিক থেকেই ধীরে ধীরে বর্ষা বিদায় নিতে শুরু করে উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে। উত্তর পশ্চিম ভারত থেকে বর্ষা অর্থাৎ দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বিদায় নেওয়া শুরু করার সাথে সাথে বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা বেড়ে যায়। যার মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ের মরশুম ( Cyclone Season ) শুরু হয়ে যায়।
ঘূর্ণিঝড়ের মরশুম বলতে ভারতের ক্ষেত্রে, প্রধানত দুটি সময় আসে। যার মধ্যে একটি হলো প্রাক বর্ষার মরশুমের ঘূর্ণিঝড়, অপরটি হল বর্ষা পরবর্তী মরশুমের ঘূর্ণিঝড়।
আর এই দুই মরশুমেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা ভারতে ক্ষেত্রে আশঙ্কা থেকে যায়। পরিসংখ্যান বলছে, প্রাক বর্ষার ঘূর্ণিঝড়ের তুলনায় বর্ষা পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা অনেক বেশি।
অর্থাৎ অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড় এর প্রবণতা সবথেকে বেশি থাকে। তাছাড়াও নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসের ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে বঙ্গোপসাগর এরকম এবং আরব সাগরে।
বিভিন্ন তথ্য এবং পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা গেছে যে অক্টোবর মাসের ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা এবং তীব্রতা দুই দিক থেকেই সবথেকে গিয়াছে অন্যান্য মাসের তুলনায়। যদি আমরা গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান দেখি তা হলেও আমরা বুঝতে পারবো যে অক্টোবর মাস হল ঘূর্ণিঝড় এর মাস গুলির মধ্যে অন্যতম এবং উল্লেখযোগ্য। এই অক্টোবর মাসেই ঘূর্ণিঝড় পিলিন ( Phailin ), ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ, ঘূর্ণিঝড় তিতলি (Titli) এর মত ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে।
অক্টোবর মাসের ঘূর্ণিঝড় গুলি সাধারণত উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গে আসার সম্ভাবনা সবথেকে বেশি থাকে।
পরবর্তী সময়ে ঘূর্ণিঝড় অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুতে এমনকি বাংলাদেশেও যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আমরা নভেম্বর-ডিসেম্বরে প্রচুর সাইক্লোন দেখেছি, যার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিডার, ঘূর্ণিঝড় ভর্তা, ঘূর্ণিঝড় অক্ষি, ঘূর্ণিঝড় হেলেন, ঘূর্ণিঝড় থানে, ঘূর্ণিঝড় নিলাম এর মত ঘূর্ণিঝড় লক্ষ্য করা গেছে।
কিন্তু মৌসুমী বায়ু চলে যাওয়ার সময় বা চলে যাওয়ার পর কেন এত ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় সাগরে ?
সাধারণত আমরা বর্ষাকালে চলতি বর্ষা মৌসুমে উল্লেখযোগ্য কোনরকম ঘূর্ণিঝড় দেখতে পাওয়া যায় না বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে।
সাধারণত বর্ষার আগে অথবা বর্ষার ফিরে যাওয়ার সময় আবার চলে যাওয়ার পর ঘূর্ণিঝড় লক্ষ্য করা যায় সাগরে।
এর মূল কারণ হলো, বর্ষার সময় দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সাগরের উপর খুবই সক্রিয় থাকে। এর ফলে মৌসুমী বায়ু প্রবল বেগে সাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যার ফলে বায়ু প্রবাহ অনেক বেশি থাকায় কোনরকম ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে পারে না। যদিও কোন নিম্নচাপ অথবা গভীর নিম্নচাপ তৈরি হয়, তা খুব দ্রুত সাগর থেকে সরে স্থলভাগের প্রবেশ করে। এর ফলে কোন সিস্টেম শক্তি বৃদ্ধি করে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে না।
কিন্তু অক্টোবর মাসে, বর্ষা চলে যাওয়ার সময় এবং বর্ষা চলে যাবার পর অতি সহজে যে কোনরকম সিস্টেম শক্তি বৃদ্ধি করে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। কারণ সেই সময় বায়ুপ্রবাহের যে গতি তা অনেকটাই রুদ্ধ হয়ে যায় ঋতু পরিবর্তন ও বায়ুচাপ বলয়ের পরিবর্তনের কারণে। যার ফলে বায়ু প্রবাহের গতি কমে যায় অনেকটাই, তাই খুব সহজে যে কোন সিস্টেম সংগঠিত হয়ে উঠতে পারে।
প্রতি বছরের মতো এবারও অক্টোবর মাসে সিস্টেম বা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের মরশুম ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এখন শুধু মৌসুমী বায়ু চলে যাওয়ার অপেক্ষা।
By P.ghosh
Update: 07:00 AM IST
19/09/2019
No comments:
Post a Comment