স্বাভাবিক সময়ের মধ্যেই ঢুকতে চলেছে বর্ষা আন্দামানে , বাংলায় কবে বর্ষা - জেনে নিন এক নজরে
May 12, 2024
মে মাসের শুরু থেকেই দেশবাসীর প্রতীক্ষা থাকে কবে তাদের এলাকায় ঢুকতে চলেছে মৌসুমী বায়ু প্রবাহ এবং বৃষ্টিপাত | দেশে প্রথম বর্ষা ঢোকে আন্দামানের ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সাধারণত ২০ থেকে ২২শের মধ্যে | তবে দেশের মূল ভূখণ্ডে অর্থাৎ কেরালাতে বর্ষা ঢোকে সাধারণত জুন মাসের ১ তারিখের মধ্যে | দেশে মৌসুমী বায়ুর ঢোকার জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট নিয়ম পালন করতে হয় | এগুলির মধ্যে প্রথম হল মে মাসের ১ তারিখের পর কেরালার তিরুবন্তপুরম, মিনিকয়, আমিনিদিভি, পুনালুর, কোল্লাম, আলাপূঝা, কোট্টায়াম, কোচি, থ্রিসুর, কোজিকোড, থালাসেরি, কান্নুর, কুডুল্লু ও ম্যাঙ্গালোর যদি দু'দিন টানা হালকা বৃষ্টিপাত হয় বর্ষাকাল তবে দ্বিতীয় দিনে কেরালাতে বর্ষা ঢুকেছে বলে মনে করা হয় | এছাড়াও আরো কিছু শর্ত যেমন দক্ষিণ আরব সাগরে বাতাসের মধ্যম স্তর উক্তি পশ্চিমা বাতাসের উপস্থিতি লক্ষণীয় এবং দক্ষিণ পূর্ব আরব সাগরের ৭৫০ মিটার উচ্চতা অব্দি ঘন্টায় ৩৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার বেগে পশ্চিমা বায়ু উপস্থিত থাকতে হবে। এছাড়াও কেরালার উপকূলীয় অঞ্চলের কাছে লক্ষ্যদীপ ও মালদ্বীপ অঞ্চলের ওপরে মেঘের ঘনসন্নি নিবিষ্ট অবস্থায় থাকা বাঞ্ছনীয় | এই মৌসুমী বায়ুপ্রবাহ আবার নির্ভর করে তাকে আরো কিছু শর্তের উপরে যেমন বাতাসের উপরিভাগে পূবালী জেট বায়ু প্রবাহ থাকতে হয় এবং রাজস্থানের উপরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ ও দক্ষিণ ভারতীয় মহাসাগরের উপর হওয়া উচ্চচাপের মধ্যে তারতম্য যত বেশি থাকবে তত তাড়াতাড়ি মৌসুমী বায়ুপ্রবাহ উত্তর ভারতীয় মহাসাগরে ঢুকতে পারে |
এছাড়াও সেই সময় মেডিয়ান জুলিয়ান অসিলেশন, নিরক্ষীয় রসবি তরঙ্গ, কেলভিন তরঙ্গ এবং বাতাসে নিম্ন স্তরে ঘূর্ণাবর্তের উপস্থিতি মৌসুমী বায়ুর আগমনকে ত্বরান্বিত করে | এছাড়াও সেই সময় ইন্ডিয়ান ওসন ডাইপলের উপস্থিতি ভারতীয় মহাসাগরে এবং প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো ও লা নিনা পরিস্থিতি মৌসুমী বায়ু প্রবাহের উপরে প্রভাব ফেলে থাকে | সাধারণত পজিটিভ ইন্ডিয়ান ওশান ডাইপোল এবং তার সাথে লা নিনা পরিস্থিতি উত্তর ভারতীয় মহাসাগরে মৌসুমী বায়ুর সঠিক সময়ে আগমন এবং সমস্ত অঞ্চলে স্বাভাবিক বা তার থেকে বেশি বৃষ্টিপাতের সংকেত বহন করে থাকে। এই বছরের সেরকমই পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে যার ফলে আশা করা হচ্ছে যে আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নিকোবর অঞ্চলের মধ্যে মৌসুমী বায়ু ঢুকতে পারে | সেই সময় দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে খুব শক্তিশালী মৌসুমী বায়ু প্রবাহের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিভিন্ন রকম গাণিতিক আবহাওয়া পূর্বাভাসের মডেল থেকে | সাধারণত মৌসুমী বায়ু ঢোকার প্রথম পাঁচ থেকে দশ দিনের মধ্যে যে অঞ্চলে ঢোকে সেখানে ভারী থেকে চরম ভারী বৃষ্টিপাত লক্ষ্য করা যায় | আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের সমুদ্রের মাঝখানে অবস্থান এবং বিক্ষিপ্তভাবে পাহাড়ি টিলার সমন্বয় এই বৃষ্টিপাতকে আরো বাড়িয়ে তোলে | এই বৃষ্টিপাত সাধারণত পাঁচ থেকে দশ দিন চলে এবং তার সাথে প্রচন্ড বজ্রপাত ও খুব অল্পক্ষণে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি লক্ষণীয় | এরকম বৃষ্টিপাতের সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলে সাময়িক বন্যা এবং ধ্বসের প্রবণতা থাকতে পারে যা রাস্তাঘাট অবরুদ্ধ করে যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলতে পারে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এক দ্বীপের সাথে অন্য দ্বীপের যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে নষ্ট করে দিতে পারে |
আবহাওয়া সমগ্র পরিস্থিতি ও গাণিতিক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল থেকে বোঝা যাচ্ছে যে এই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হতে পারে যা মৌসুমী বায়ু প্রবাহকে টেনে ২২ থেকে ২৩ মে এর মধ্যে নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সমগ্র অংশ এবং আন্দামানের দক্ষিণ অংশে মৌসুমী বায়ু প্রবাহের আগমন ঘটাতে পারে |
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সেই মৌসুমী বায়ুর প্রবাহ জুন মাসের প্রথম কিংবা দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতেই উত্তর-পূর্ব ভারতসহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের পূর্বাংশে ঢুকে যেতে পারে | মৌসুমী বায়ুপ্রবাহ আন্দামানে ও দেশের মূল ভূখণ্ডে ঠিক কখন ঢুকবে তার ওপর নির্ভর করে থাকবে পশ্চিমবঙ্গে মৌসুমী বায়ুপ্রবাহ কখন ঢুকবে তা | আমরা সমগ্র পরিস্থিতির ওপরে সর্বদা নজর রেখে চলেছি ও মৌসুমী বইয়ের অগ্রগতি সম্পর্কিত কোন তথ্য সঠিক সময়ে ও সবার আগে জানতে জুড়ে থাকুন আমাদের সাথে সর্বদা |
No comments:
Post a Comment