এল নিনো ও লা নিনা এই শব্দ দুটি স্প্যানিশ শব্দ যার অর্থ দুষ্টু ছেলে ও শান্ত মেয়ে অর্থাৎ এই দুটি শব্দ অস্থিরতাকে ও স্থিরতাকে প্রকাশ করে | পেরুর নাবিকগণ পেরু উপকূলে সমুদ্র জলের উষ্ণতার তারতম্য অনুযায়ী এই শব্দ দুটি প্রচলন করেন |
সাধারণত পেরু উপকূলে কুমেরু মহাসাগর থেকে শীতল জলস্রোতের প্রভাবে সে অংশে প্রশান্ত মহাসাগরের জলতল সাধারণত ঠান্ডা থাকে |
লা নিনা অবস্থাতে সাধারণত পেরু উপকূলে সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবে ঠান্ডা থাকে এবং ইন্দোনেশিয়ার কাছে তা গরম থাকে এর ফলে পেরু উপকূলের উপরে উচ্চচাপের অবস্থান জনিত কারণে পরিষ্কার আকাশ ও ইন্দোনেশিয়ার ওপরে নিম্নচাপের অবস্থানজনিত কারণে বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড় বৃষ্টি হয় | এই পর্যায়ে সাধারণত প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে জোরালো পূবালী বাতাসের জেড়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং সংলগ্ন অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় যার ইতিবাচক প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের ওপরে পরে | লা নিনা বছরে সাধারণত এ কারণে শীত ও স্বাভাবিক বা তার একটু বেশিই পড়ে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে তবে সাধারণত এর ফলে বাতাসে দূষণ মাত্রা বেড়ে যায় |
এল নিনো পরিস্থিতি এর ঠিক বিপরীত অবস্থা অর্থাৎ পেরু উপকূলের সমুদ্র জল গরম থাকার কারণে সেই অঞ্চলে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় এবং সেখান থেকে পেরু ও সংলগ্ন আটাকামা মরুভূমিতে স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টিপাত হয়, অপরদিকে ইন্দোনেশিয়ার ওপরে সমুদ্র যাতে তাপমাত্রা ঠান্ডা থাকার কারনে উচ্চচাপ সৃষ্টি হয় যার ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে জোরালো পশ্চিমা বাতাস প্রবাহিত হয় | এর নেতিবাচক পড়ে ভারতীয় মহাসাগরের মৌসুমি বায়ু প্রবাহের উপরে, মৌসুমী বায়ু প্রবাহ দ্বারা বয়ে আনা সমস্ত বৃষ্টির মেঘ সেই পশ্চিমা বাতাসের দ্বারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ছেড়ে দক্ষিণ আমেরিকার দিকে প্রবাহিত হয় যার ফলে বর্ষাকালে ভারতের গাঙ্গেয় সমভূমিতে দীর্ঘকাল ব্যাপী অনাবৃষ্টি পরিলক্ষিত হয় এবং তার নেতিবাচক পরে পশ্চিমবঙ্গেও যার ফলে যার পশ্চিমবঙ্গের কৃষি ব্যবস্থা এবং তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে গভীরভাবে প্রবাহিত করে।
এল নিনো বছরে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত না হলেও এটি পশ্চিমের ঝঞ্ঝার আগমনের সংখ্যা বৃদ্ধি করে যার ফলে শীতকালেও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে হালকা মাঝারি বৃষ্টিপাতের দেখা মেলে এবং কখনো কখনো এটি বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া বর্ষাকাল পরবর্তী পর্যায়ের ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবিত করে যার ফলে শীতকালের বেশিরভাগ অংশে, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন কখনো কুয়াশাতে ঢাকা থাকে |
এল নিনো পরিস্থিতি সাধারণত বায়ুমণ্ডলে অস্থিরতা সৃষ্টি করার কারনে পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর উপরে ও অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায় অর্থাৎ হঠাৎ করে তীব্র তাপ প্রবাহের আবির্ভাব এবং তারই সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে প্রবল কালবৈশাখীর আবির্ভাব লক্ষ্য করা যায় বসন্তকালে | এল নিনো বছরে শীতকাল থেকে সরাসরি গরমকালের উপস্থিতি এবং তার বিস্তৃতি ও তীব্রতা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায় | এল নিনো বছরে বর্ষার দেরিতে আগমন এবং তাড়াতাড়ি বিদায় নেওয়া পশ্চিমবঙ্গের উপর থেকে একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যার ফলে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জেলা যেমন পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দক্ষিণ দিনাজপুর ইত্যাদি খরার সম্মুখীন হয় যার ব্যাপক প্রভাব পড়ে রাজ্যের অর্থনীতির উপরে |
এল নিনো বছরে এই কারণে দুর্বল মৌসুমী বায়ু অনাবৃষ্টি, অতিরিক্ত গরম অনুভূত হয় যেখানে লা নিনা বছরে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত জনিত কারণে কিছু কিছু অংশে বন্যা পরিস্থিতির পরিলক্ষিত হয় বিশেষত দক্ষিণবঙ্গের উপরে |
এরকমই আবহাওয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সহজ ভাবে বুঝতে জুড়ে থাকুন আমাদের সাথে সর্বদা |

No comments:
Post a Comment