বর্ষার পূর্বাভাস ২০১৯ - Weather of West Bengal

My weather, my bengal.

Sunday, May 19, 2019

বর্ষার পূর্বাভাস ২০১৯


দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু অর্থাৎ বর্ষা আমাদের রাজ্যে প্রবেশের সময় চলে এসেছে। নির্ঘণ্ট মেনে বর্ষা প্রবেশের দিন ক্রমশ এগিয়ে আসছে।
তাই গ্রীষ্মের শেষে এখন বর্ষার অপেক্ষায় দিন গুনছে রাজ্য সহ গোটা দেশ।
এই দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর ওপর নির্ভর করে ভারতের কৃষি থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক পরিকাঠামো নির্ভর করে আছে অনেকটাই।
ভারতবর্ষের কৃষি এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই বর্ষা। তাই বলা যায় যে এই বর্ষার উপর নির্ভর করে ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে চলেছে প্রত্যেক বছরের মতো।
তাই সাধারণ মানুষ থেকে কৃষক এবং আর্থিক বিনিয়োগকারীদের এখন নজর শুধুমাত্র বর্ষার দিকে।
Tendency of Rainfall in past 10 year

🌤️ কেমন হতে পারে এই বছর কার ভারতবর্ষে বর্ষার মতিগতি ? 
কতটাই বা হতে পারে এ বছর কার বর্ষা ভারতবর্ষে ? 
কোন রাজ্যে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে এ বছর মৌসুমী বায়ু ? 

⭐ এই সমস্ত বিস্তারিত তথ্য নিয়ে প্রতিবছরের মতো এবছরও ওয়েদার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর তরফ থেকে দীর্ঘমেয়াদি বর্ষার পূর্বাভাস করা হচ্ছে।
এই বছর বর্ষার পূর্বাভাস করতে গিয়ে ওয়েদার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল গত প্রায় ৫০ বছরের আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ বিশ্লেষণ এবং বর্তমান আবহাওয়া পরিস্থিতি এবং জলবায়ু পরিস্থিতিকে পর্যবেক্ষণ করে এই পূর্বাভাস টি করা হয়েছে।

ওয়েদার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এই পুরো কাজটি করতে গিয়ে মিডিয়ান যুলিয়ান অশ্সিলেশন, এল নিনো, ইন্ডিয়ান ওসিয়ানিক ডাইপোল এবং সমস্ত আপার ট্রপোস্ফিয়ারিক ওয়েদার অ্যাক্টিভিটি পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করে এই পোস্টটি করেছে।

এই বছর বর্ষার আবহাওয়া পরিস্থিতি ও চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে যে এবছর ভারতবর্ষে বর্ষা স্বাভাবিক বা স্বাভাবিকের থেকে কিছুটা কম বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
লং পিরিয়ড এভারেজ হিসাবে এবছর ভারতবর্ষে ৯১% এল পি এ হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
যা স্বাভাবিক বা স্বাভাবিকের থেকে কিছুটা কম।


🌊 যেহেতু ইন্ডিয়ান ওসিয়ানিক ডাইপোল পজিটিভ হওয়ায় এবং এল নিনো তীব্রতা কমে যাওয়ায় ভারতবর্ষের অধিকাংশ অংশের চরম ক্ষরার সম্ভাবনা না থাকলেও উত্তর-পশ্চিম ভারতের স্বাভাবিকের তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণ কম বৃষ্টিপাত হবে। এর ফলে রাজস্থান, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, পূর্ব মধ্যপ্রদেশের বিস্তীর্ণ অংশ বৃষ্টিপাতের ঘাটতি দেখা যেতে পারে।



অন্যদিকে উত্তর পূর্ব ভারত সহ পূর্ব ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্য তে ভাল রকম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ভালো রকম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে কেরালা কর্ণাটক এবং মহারাষ্ট্র রাজ্যের উপকূলবর্তী অঞ্চল সহ অধিকাংশ অঞ্চলে। 
⛈️ বৃষ্টিপাত অতিরিক্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে উত্তর পূর্ব ভারতের অধিকাংশ রাজ্যগুলোতে। সে ক্ষেত্রে এ বছর বর্ষায় আসাম মেঘালয় মণিপুর ত্রিপুরা এই সমস্ত রাজ্যগুলোতে স্বাভাবিকের থেকে অনেকগুণ বেশি বৃষ্টিপাত লক্ষ্য করা যাবে এ বছর।
☔ সে ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ এই বছর খুব ভালো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে এবং কোথাও কোথাও স্বাভাবিকের থেকে অনেকগুণ বেশি বৃষ্টিপাত হবে। স্বাভাবিকের থেকে অনেকগুণ বেশি বৃষ্টিপাত হবে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা গুলিতে।
এছাড়া উড়িষ্যা পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডের কিছু অংশে খুব ভালো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে এবং স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হবে ছত্রিশগড়েও।
উড়িষ্যার বেশ কিছু অংশে স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি লক্ষ্য করা যাবে এ বছর।

🔴 বর্ষার অগ্রগতি:
দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ইতিমধ্যেই গতকাল 18 ই মে, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অধিকাংশ অঞ্চল এবং সাগরে প্রবেশ করেছে।
আগামী 48 থেকে 72 ঘন্টায় মৌসুমী বায়ু আরো অগ্রসর হয়ে সমগ্র আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে প্রবেশ করবে।
মৌসুমী বায়ু কিছুটা দুর্বল হওয়ায় এবং মিডিয়ান জুলিয়ান অসিলেশন ফেজ্ ৮ এবং অ্যামপ্লিচিউড ১ এর কম থাকায় দুর্বল রয়েছে। 
তবে আগামী চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে মিডিয়ান যুলিয়ান অশ্চিলেশন ফেজ্ ১ এবং অ্যামপ্লিচিউড এক বা তার বেশি হবার কারণে বর্ষা আবার কিছুটা সক্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে উত্তর আন্দামান সাগর তৎসংলগ্ন অঞ্চলের ওপর ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ায়, এবং তা কিছুটা শক্তি বৃদ্ধি করে মায়ানমার সংলগ্ন অঞ্চলের থাকার ফলে উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রাক বর্ষার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে এবছর কেরলে বর্ষা প্রবেশ করার আগেই উত্তর-পূর্ব ভারতে বর্ষা প্রবেশ করে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।
সেক্ষেত্রে ভারতের কেরলে বর্ষা প্রবেশ করার আগেই উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রবেশ করে যেতে পারে। 
তবে কি হলে আগামী ২ রা জুন থেকে 5 ই জুন এর মধ্যে বর্ষা প্রবেশ করে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। 
কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গে সে ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৭ ই জুন এর মধ্যে বর্ষা প্রবেশ করার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি।
এবং ধীরে ধীরে ২রা থেকে ৬ ই জুলাই এর মধ্যে বর্ষা ভারতের ৯০% অঞ্চলে প্রবেশ করে যাবে।

☑️ বিশেষ নোট: 

  • এই বছর বর্ষার আগে আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা এখনো পর্যন্ত নেই। 
  • এই বছর বর্ষার প্রথম মাস জুন মাসে, কমপক্ষে একটি নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • জুলাই থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে কমপক্ষে দুই থেকে তিনটি নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • সেপ্টেম্বর মাসে কমপক্ষে একটি নিম্নচাপের সম্ভাবনা রয়েছে।

⛈️ পশ্চিমবঙ্গের বর্ষা: 
পশ্চিমবঙ্গের বর্ষার ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে গত বছর পশ্চিমবঙ্গের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে।
২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ বঙ্গের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৯৩৬.৮ মিলিমিটার। 
এবং উত্তরবঙ্গে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৭৪০.৬ মিলিমিটার।
এবছর পশ্চিমবঙ্গের বর্ষা মোটের উপর স্বাভাবিক যাবে। উত্তরবঙ্গে স্বাভাবিক বা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও দক্ষিণ বঙ্গের সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বর্ষা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গে ক্ষেত্রে ৯৪% এল পি এ এবং উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে ৯২% এল পি এ হবার সম্ভাবনা থাকছে।

⭐ সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণবঙ্গে জুন মাসের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ থাকবে স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই কম। বর্ষার প্রথম মাসে দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জেলাগুলিতে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি দেখা যেতে পারে। কিন্তু জুন মাসে ভালো রকম বৃষ্টিপাত হবে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে। উত্তরবঙ্গে বর্ষার প্রথমে খুবই সক্রিয় থাকবে। 

⭐ জুলাই মাসে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি পাত এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে জুন মাসের বৃষ্টিপাতের ঘাটতি অনেকটাই মেটাতে সক্ষম হবে জুলাই মাসের বৃষ্টিপাত। জুলাই মাসে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী অঞ্চল গুলোতে বেশি বৃষ্টিপাত হবে।
তবে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে বৃষ্টিপাত যথেষ্ট কমে যেতে পারে। উত্তরবঙ্গে জুলাই মাসে বর্ষার সক্রিয়তা যথেষ্ট কম থাকবে। এর ফলে সেখানে অনেকটা ঘাটতি তৈরি হতে পারে।

⭐ বর্ষা তখন মধ্যগগনে থাকবে আগস্ট মাসে। পুরো রাজ্যজুড়ে ই আগস্ট মাসে বৃষ্টিপাত থাকবে স্বাভাবিক। তবে আবারো উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির সহ দক্ষিণবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলা গুলিতে বর্ষা থাকবে বেশি সক্রিয়। দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলা গুলিতে থাকবে বর্ষার স্বাভাবিক বৃষ্টি। আগস্ট মাসে বৃষ্টিপাত অনেকটাই পুষিয়ে দেবে বলে আশা করা যায়।

⭐ বর্ষার শেষ মাস সেপ্টেম্বর। এই মাসে ধীরে ধীরে বৃষ্টিপাত কমতে থাকবে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। তবে উত্তরবঙ্গ সহ তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের রাজ্যগুলোতে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ চলবে। উত্তরবঙ্গে সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে বলে আশা করা যায়।
সেপ্টেম্বর মাসে এই বছর একের পর এক নিম্নচাপ অক্ষরেখা এবং ঘূর্ণাবর্তের প্রভাব বিস্তার করবে বিহার সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গে। 
এর প্রভাবে বর্ষা সক্রিয়তা অনেক গুণ বৃদ্ধি পাবে উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে।
এইভাবে ধীরে ধীরে বিদায় নেবে বর্ষা। তবে উত্তরবঙ্গের বর্ষার ঘাটতি পুষিয়ে দিতে পারে সেপ্টেম্বর মাসের বৃষ্টিপাত।

আর দক্ষিণ বঙ্গে বর্ষা ভালো রকম সক্রিয়তা দেখা যাবে জুলাই এবং আগস্ট মাসে।
তবে বর্ষার চরিত্রগত কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। সে ক্ষেত্রে বর্ষা একটানা বৃষ্টিপাত হওয়ার পরিবর্তে, অতি কম সময়ের মধ্যে অতি প্রবল বর্ষণ দেখা যেতে পারে নির্দিষ্ট অঞ্চল গুলোতে। এর ফলে সাময়ীকভাবে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে ঐ সমস্ত অঞ্চলে।
অর্থাৎ কম সময়ে অধিক পরিমাণ বৃষ্টিপাতের ফলে ভূমিধস বন্যা মতো বিপদ জনক ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে ২০১৯ এ বর্ষা পশ্চিমবঙ্গের জন্য যাবে স্বাভাবিক।
কিন্তু সার্বিকভাবে দেশের ক্ষেত্রে বর্ষা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 ওয়েদার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর তরফ থেকে জানানো হচ্ছে যে এই পূর্বাভাস টি সম্পূর্ণ নিজস্ব এবং সমস্ত আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করে করা হয়েছে।

🔴 সংক্ষিপ্তসার: 
  • এবছর গোটা দেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের থেকে তুলনামূলক কম বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা।
  • ৯১% এল পি এ এই বছর বর্ষায় সম্ভাবনা, সার্বিকভাবে গোটা দেশে।
  • সমগ্র দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা উত্তর-পূর্ব ভারতে।
  • বৃষ্টিপাতের ঘাটতির সম্ভাবনা উত্তর-পশ্চিম ভারতে।
  • পশ্চিমবঙ্গের স্বাভাবিক বর্ষার সম্ভাবনা।
  • দক্ষিণবঙ্গে স্বাভাবিক বর্ষার সম্ভাবনা।
  • উত্তরবঙ্গে স্বাভাবিকের তুলনায় একটু কম বর্ষার সম্ভাবনা।
  • জুলাই এবং আগস্ট মাসে পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা সব থেকে বেশি থাকবে।
  • ২রা জুন থেকে ৫ই জুনের মধ্যে বর্ষা কেরলে প্রবেশ করবে।
  • ১২ ই জুন থেকে ১৭ ই জুনের মধ্যে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা প্রবেশ করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

By
P.Ghosh
S. Ghosh
D. Majumdar 
R. Bhakat 
S. Dhara
T. Das 
K. Patra

Update: 06:30 PM IST
19/05/2019


1 comment: