৩১শে আগষ্ট ২০২৩
নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনা মহামারিতে যদি ১০০ জনে মৃত্যুহার ৩.৪% হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে জলাতঙ্ক বা রেবিস ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুহার ১০০ জন আক্রান্ত হলে ১০০ জনই মারা যাবে অর্থাৎ ১০০% নিশ্চিত মৃত্যুহার যুক্ত ভাইরাস জনিত কুকুর থেকে সংক্রামিত ব্যাধি হলো রেবিস। এটি মূলত ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হয়ে থাকে। কুকুরের সংস্পর্শে বেশিক্ষণ থাকলে কুকুরের লালারস থেকে রেবিস ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে থাকে। শরীরে থাকা ক্ষতস্থান যদি রেবিস ভাইরাস আক্রান্ত কুকুর চেটে দেয় বা কামড় বসিয়ে দেয় শরীরের উপর সেক্ষেত্রে উপযুক্ত সময় টিকা না নিলে রেবিস ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাবেই। আর এর থেকে যন্ত্রণাদায়ক ও কষ্টকর মৃত্যু বোধহয় আর কোনো রোগ দেয় না। দীর্ঘদিন জলপান না করে তৃষ্ণায় ও পিপাসায় বুক ফেটে যাবে তবু রোগী জলপান করবেনা এতটাই ভয়াবহ রোগ তাই এই রোগের নাম হলো জলাতঙ্ক। পথ কুকুরকে খাবার দেওয়ার পাশাপাশি যাতে পথ কুকুরদের ঠিকমতো জলাতঙ্ক টিকা দেওয়া হয় সেদিকে দেখা জনসাধারণ থেকে সরকার সকলের উচিৎ। করোনার সংক্রামণ হার শুধু বেশি ছিল তাই লাইমলাইটে যায়গা পেয়েছিল কিন্তু জলাতঙ্কে আক্রমণ হার করোনার তুলনায় কম হলেও সংক্রামিত ব্যক্তির মৃত্যু অবধারিত ভাবে হবে। জলাতঙ্ক সংক্রামণ বৃষ্টিবহুল আবহাওয়ায় কম হলেও আদ্র ও অস্বস্তিকর উষ্ণ আবহাওয়াতে জলাতঙ্ক সংক্রামণের হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে যায়। উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়াতে রেবিস ভাইরাস শক্তিশালী হয়ে ওঠে শীতকাল ও বৃষ্টিযুক্ত আবহাওয়ার তুলনায়। পশ্চিমবঙ্গে ভাদ্র মাসের আবহাওয়া ও গ্রীষ্মের আবহাওয়াতে জলাতঙ্ক সংক্রামণ সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে তুলনামূলক ভাবে ভাদ্র মাসের আবহাওয়াতে কুকুরের প্রজনন সময় হবার কারণে ও হরমোন জনিত কারণে কুকুর খুবই ক্ষিপ্র ও হিংস্র রূপ ধারণ করে। শুধু প্রজনন ও হরমোন জনিত কারণ ছাড়াও উষ্ণ আদ্র ও অস্বস্তিকর আবহাওয়ায় কুকুর শারীরিক ও মানসিক ভাবে যথেষ্ট কষ্ট পেয়ে অত্যধিক মাত্রায় আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। এরকম হলে কুকুর সামান্য কারণে বা বেশ কিছু সময় প্রায় বিনা কারণেই কামড়ে দেয়। যারজন্য ভাদ্র মাসে জলাতঙ্ক সংক্রামণ ও কুকুর দ্বারা কামড়ের হার তুলনামূলকভাবে ভাবে বেশি হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালীন সময়ে ও ভাদ্র আশ্বিন মাসে রেবিস ভাইরাস অতি মাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং কুকুরের ক্ষেত্রে রেবিস ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড থাকে ৩ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত। অর্থাৎ কোনো কুকুর এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে রেবিস ভাইরাস সংক্রমিত হলেও তার ইনকিউবেশন পিরিয়ড শেষ হয়ে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে আগষ্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত হতে পারে। গ্রীষ্মকালীন সময়ে রেবিস ভাইরাস আক্রান্ত হলেও আগষ্ট সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শেষ হয়ে রোগলক্ষণ শুরু হয় যারজন্য আগষ্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে জলাতঙ্কে আক্রান্ত কুকুর অস্থির হয়ে ওঠে রোগ প্রকাশ পেলে এর পাশাপাশি আদ্র ও অস্বস্তিকর ঘর্মাক্ত ভ্যাপসা গরম জলাতঙ্ক রোগের কষ্টপ্রাপ্ত কুকুর আরো কষ্ট পেয়ে মানুষকে সামান্য কারণে ও অকারণেই ভয় পেয়ে ক্ষিপ্র হয়ে কামড় বসিয়ে দিতে পারে মানুষকে এছাড়া এই সময় কুকুরটি জিভ দিয়ে মানুষের ক্ষতস্থান চেটে দিলেও জলাতঙ্ক হতে পারে। ইনকিউবেশন পিরিয়ডে ভাইরাস থাকা কুকুরকে সনাক্ত না করা গেলেও রোগলক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করলে জলাতঙ্ক আক্রান্ত কুকুরকে সনাক্ত করা সম্ভব। জলাতঙ্ক রোগাক্রান্ত কুকুরের মুখ দিয়ে অনবরত লালা ঝরবে। জলের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে। এছাড়া শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি দেখা যাবে। অল্প কোলাহল বা উত্তেজনাতেই তাড়া করবে বা কামড় বসিয়ে দিতে পারে। জলাতঙ্ক আক্রান্ত হলে কুকুরের চিকিৎসা নেই। সেক্ষেত্রে সরকারকে কুকুর গুলিকে আইসোলেট করতে হবে বা মেরে ফেলতে হবে হাঁ খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। যেকোনো কুকুর কামড়ালেই ক্ষতস্থান দ্রুত সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অ্যান্টি রেবিস ভ্যাকসিন নিতে হবে এবং প্রত্যেক ডোজ কম্প্লিট করতে হবে। পথ কুকুরদের খাবারের পাশাপাশি টিকাকরণ যাতে জরুরি করা যায় তার উপর সরকার ও সকল পশুপ্রেমী সংগঠনকে পদক্ষেপ নিতে হবে। আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে রেবিসের সংক্রামণ বেশি হয় তাই যারা পথ কুকুরদের খাবার দেন লোকালয় থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রীষ্মকালের পাশাপাশি ভাদ্র ও আশ্বিণ মাসে পথ কুকুরদের এড়িয়ে চলা উচিত। বাড়িতে পোষা কুকুরদের ভাদ্র ও আশ্বিণ মাসে টিকাকরণ শতভাগ করা উচিৎ। শীতকাল ও বৃষ্টিবহুল আবহাওয়ার তুলনায় গ্রীষ্মকাল ও ভাদ্র - আশ্বিন মাসে কুকুরের ও মানুষের ভয়াবহ জলাতঙ্ক দ্বারা সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তাই এই সময় কুকুর থেকে বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করুন।

No comments:
Post a Comment