🌊 লা নিনার প্রভাবে এই বছরে জাঁকিয়ে শীত : এর প্রভাব ঠিক কিরকম পড়তে চলেছে বঙ্গে দেখে নেওয়া যাক ❄️

🌊 লা নিনার প্রভাবে এই বছরে জাঁকিয়ে শীত : এর প্রভাব ঠিক কিরকম পড়তে চলেছে বঙ্গে দেখে নেওয়া যাক ❄️

আবহাওয়ার অদ্ভুত সব খেয়ালখুশির পেছনে প্রকৃতিরই রহস্য লুকিয়ে থাকে। এরই একটি প্রধান দিক হলো লা নিনা (La Niña)। এটি একধরনের জলবায়বিক ঘটনা, যা প্রশান্ত মহাসাগরের নিরক্ষীয় অঞ্চলের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে গঠিত হয়। সহজভাবে বললে, যখন নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরে সমুদ্রের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় শীতল হয়ে যায় এবং বায়ুমণ্ডলীয় প্রবাহে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে, তখন তাকে বলা হয় লা নিনা।

❄️ লা নিনা কীভাবে গড়ে ওঠে?

লা নিনা মূলত এল নিনোর বিপরীত প্রক্রিয়া। যেখানে এল নিনোর সময় প্রশান্ত মহাসাগরের পানি অস্বাভাবিকভাবে উষ্ণ হয়, সেখানে লা নিনা কালে পানি ঠান্ডা হতে শুরু করে। সমুদ্রপৃষ্ঠের এই অস্বাভাবিক শীতলতা বিশ্বব্যাপী বায়ুপ্রবাহের ধরনে প্রভাব ফেলে। ফলে একদিকে কোথাও প্রবল বৃষ্টি, কোথাও খরা, আবার কোথাও প্রচণ্ড ঠান্ডার পরিস্থিতি তৈরি হয়।

🌍 লা নিনার বিশ্বব্যাপী প্রভাব

লা নিনার কারণে বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার ধরণে বড় পরিবর্তন ঘটে।

👉দক্ষিণ আমেরিকার কিছু দেশে তীব্র খরা দেখা দেয়।

👉অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বর্ষা বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়।

👉উত্তর আমেরিকায় শীতকালে ঠান্ডা এবং তুষারপাত বেড়ে যায়।

👉এইভাবে সমুদ্রের গভীর থেকে শুরু হওয়া এক পরিবর্তন, পুরো পৃথিবীর ঋতুচক্রে আলোড়ন তোলে।

*🇮🇳 ভারতের আবহাওয়ায় লা নিনার প্রভাব*

ভারতের মতো উপমহাদেশীয় দেশে লা নিনার প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। বর্ষা মৌসুমে এটি সাধারণত বেশি বৃষ্টিপাত নিয়ে আসে, যা কৃষির জন্য উপকারী হতে পারে। তবে শীতকালে লা নিনার প্রভাব ভিন্ন রূপ ধারণ করে।

লা নিনা উপস্থিত থাকলে উত্তর ও মধ্য ভারতের ওপর দিয়ে প্রবল পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এবং উত্তর দিকের শীতল বাতাস সহজে দক্ষিণে নেমে আসে। এর ফলে শীতকালে তাপমাত্রা অনেকটাই নেমে যেতে পারে। বাংলাসহ উত্তর-পূর্ব ভারত, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে হিমেল ঠান্ডা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

*❄️ ২০২৫-এর শীতে লা নিনার ইঙ্গিত*

এ বছর লা নিনা প্রবল থাকায় ভারতে শীতের জাঁকিয়ে উপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই ঠান্ডার প্রভাব বাড়বে এবং জানুয়ারি নাগাদ দেশের উত্তর ও মধ্যভাগে পারদ নেমে যেতে পারে অনেকটা। অনেক অঞ্চলে কুয়াশা ঘন হবে, এমনকি উত্তর ভারতে শৈত্যপ্রবাহের মাত্রা হতে পারে স্বাভাবিকের তুলনায় তীব্র।

                    লা নিনা হলো সমুদ্র থেকে আসা প্রকৃতির এক অদৃশ্য বার্তা, যা শীতকে করে তুলতে পারে আরও কঠোর ও দীর্ঘস্থায়ী। তাই বলা যায়, সমুদ্রের গভীরে শুরু হওয়া পরিবর্তনই আমাদের শীতের চাদর আরও মোটা করে তুলতে পারে। ভারতের মানুষ এ বছর সম্ভবত উপভোগ করবে একেবারে খাঁটি জাঁকিয়ে শীত, যার পেছনে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের রহস্যময় স্রোত—লা নিনা।