গ্রীষ্মকালের আগামী ৩ মাসে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ২০২০ - Weather of West Bengal

My weather, my bengal.

Monday, March 09, 2020

গ্রীষ্মকালের আগামী ৩ মাসে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ২০২০


গ্রীষ্মকালীন দীর্ঘমেয়াদী আবার পূর্বাভাস ২০২০, ওয়েদার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর তরফ থেকে এই বছর গ্রীষ্মকালীন দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়ার পূর্বাভাস এর মাধ্যমে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক আবহাওয়া পরিস্থিতি একটি সম্যক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। বর্তমান আবহাওয়া পরিস্থিতি এবং সমস্ত রকম জলবায়ু পরিবর্তন কে মাথায় রেখে সমগ্র বিশ্বের ছোট খাটো আবহাওয়া পরিবর্তন এবং খুঁটিনাটি নজর রেখে এই দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পূর্বাভাস কি করতে চলেছে। 
গ্রীষ্মকালীন দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়ার পূর্বাভাস গ্লোবাল এনসেম্বল মডেল, ক্লাইমেট ফর্কাস্টিং সিস্টেম, নিউমেরিক্যাল এবং স্ট্যাটিসটিক্যাল এনালাইসিস এর মাধ্যমে আগামী তিন মাস মার্চ মাসের বাকি সপ্তাহ গুলি থেকে এপ্রিল মে এবং জুন মাসের মধ্যে পর্যন্ত এই আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে।


Global Ensemble Model Analysis
এই আবহাওয়ার পূর্বাভাস এর মাধ্যমে আগামী তিন মাসের সমগ্র ভারতের এবং সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের গড় উষ্ণতার পূর্বাভাস, সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পূর্বাভাস, গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস, এবং প্রাক বর্ষার ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত পূর্বাভাস দেওয়া হল।

সর্বশেষ আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুযায়ী, সমগ্র জানুয়ারি মাসের অধিকাংশ সময়ই শীতের তীব্রতা যথেষ্ট বেশি ছিল, যা প্রায় ফেব্রুয়ারি মাসের অধিকাংশ সময় পর্যন্ত বহাল ছিল এবং সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কম ছিল। 

বর্তমান আবহাওয়ার স্থিতি বিশ্লেষণ করে জানানো হচ্ছে যে মার্চ মাসের অধিকাংশ সময় সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে যথেষ্ট পরিমাণ কম থাকবে। ভারতের উত্তর অংশ এবং পূর্ব ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলে ঝড় বৃষ্টির কারণে স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকছে এই সময়গুলোতে। যার ফলে তাপমাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিকের থেকে কম থাকবে।


তবে মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে সমগ্র ভারতের আবহাওয়া চিত্র ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হবে।
ভারতের মধ্য ভাগ এবং উত্তর অংশের সাথে সাথে পূর্ব ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে। 


সমগ্র ভারতের মধ্যে এই বছর সবথেকে বেশি বার তাপপ্রবাহ সম্মুখীন হতে পারে মধ্য ভারত এবং পূর্ব মধ্য ভারতের অধিকাংশ অঞ্চল। সবথেকে বেশি সময় ধরে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ১.০° থেকে ২.৫° সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশি থাকবে ওই সমস্ত অঞ্চলে। 
এই সমস্ত অঞ্চল গুলি হল: 
পূর্ব মধ্য প্রদেশ,
ছত্রিশগড়,
পূর্ব উত্তর প্রদেশ,
বিহার, 
উড়িষ্যা
পূর্ব মহারাষ্ট্র, 
ঝাড়খন্ড।

এই সমস্ত অঞ্চলে সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে এই বছরে। আর তারই প্রভাব পড়তে চলেছে পশ্চিমবঙ্গেও।

তার কারণ হিসেবে জানানো হচ্ছে যে, এই বছর বঙ্গোপসাগরে উচ্চ চাপ বলয় এর গতি প্রকৃতি খুবই অন্যরকম। এইবছর উচ্চচাপ বলয় টি দুর্বল হয়ে কিছুটা অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে চলে যাওয়ায় উচ্চচাপ বলয় এর জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস পশ্চিমবঙ্গে সেরকমভাবে প্রবেশ করে প্রভাবিত করতে পারবেনা। তারই সাথে পশ্চিমী উষ্ণ এবং শুষ্ক বাতাসের প্রভাবে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ জেলাগুলি প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 
যার ফলে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সমগ্র ভারতে অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে। 
যার ফলস্বরুপ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে যথেষ্ট পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
মার্চ মাসের থেকে এপ্রিল মাসে বৃষ্টিপাত হওয়ার প্রবণতা ক্রমশ কমতে শুরু করবে, সেক্ষেত্রে ওয়েদার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর তরফ থেকে স্পষ্টতই জানানো হচ্ছে যে এপ্রিল মাসের কোন একটি সপ্তাহে একবার ঝড় বৃষ্টি হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে অনেকটা সময় লেগে যেতে পারে। 
অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে এই ঘন ঘন ঝড়বৃষ্টির প্রবণতা কমে যাওয়ার কারণে তাপমাত্রা এবং অসহনীয় গরমের সম্মুখীন হতে পারে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ বাসী।
 সমস্ত রকম আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে, ওয়েদার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর তরফ থেকে স্পষ্টতর জানানো হচ্ছে যে, এই বছর এপ্রিল মাসের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে এক থেকে দু ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলির মধ্যে কোথাও কোথাও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০°সেলসিয়াস বা তার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 



April & May Temperature analysis.
সবথেকে বেশি প্রভাবিত হতে পারে; পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান এবং বীরভূমে। এই সমস্ত জেলাগুলির ক্ষেত্রে তাপপ্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি থাকছে।
উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির ক্ষেত্রেও একই রকম আবহাওয়া পরিস্থিতি থাকলেও তবে দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় ঝড়বৃষ্টির প্রবণতা বা সম্ভাবনা বেশি থাকবে এপ্রিল মাসে।

মে মাসের আবহাওয়া; পশ্চিমবঙ্গের জন্য হতে পারে এপ্রিল মাসের থেকে কিছুটা ভালো। এপ্রিল মাসের প্রবল সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, মে মাসে এপ্রিল মাসের তুলনায় গরম থাকতে পারে কিছুটা কম। তারি সাথে বজ্রবিদ্যুৎ সহ একের পর এক ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। 
ওয়েদার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর তরফ থেকে জানানো হচ্ছে যে, এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাসে একের পর এক ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে, যার কারণে কমবেশি বিভিন্ন অঞ্চলে ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাস হতে পারে কিছুটা স্বস্তিদায়ক।
উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে মে মাসে ঝড়বৃষ্টির প্রবণতা থাকলেও সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ০.৫° থেকে ১.৫° সেলসিয়াস বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে সময়ের সাথে সাথে মে মাসের শেষের দিক থেকে বাতাসে আপেক্ষিক আদ্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায়, জুন মাস থেকে কিন্তু গরমের সাথে সাথে ঘর্মাক্ত আবহাওয়া পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে যার ফলে গরম এর সাথে সাথে আদ্রতা জনিত অস্বস্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরম গরম এর সম্ভাবনা রয়েছে। 

তবে এপ্রিল মাসের তুলনায় মেয়ে মাস এবং জুন মাসের সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মে মাস এবং জুন মাসে সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা থাকতে পারে স্বাভাবিকের থেকে ১° থেকে ২° সেলসিয়াস বেশি। যার ফলে রাতেও গরম এবং ঘর্মাক্ত পরিস্থিতি থেকে রেহাই মিলবে না খুব বেশি।

এমনই আবহাওয়া পরিস্থিতি বজায় থাকবে জুন মাসের প্রায় মধ্য সপ্তাহ পর্যন্ত। বর্ষা আসার পর থেকে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে।

Avarege Temperature Anomaly

কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আবহাওয়া পরিস্থিতিতে এবছর গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হচ্ছে যে গড় সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ১° এবং ২° ডিগ্রী বেশি থাকবে।
এবং এই বছর গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া পরিস্থিতির ক্ষেত্রে কলকাতা বা শহরতলীকে কমপক্ষে একবার হলেও তাপপ্রবাহের মত আবহাওয়া পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে।
তবে এই গ্রীষ্মকালের অধিকাংশ সময় উষ্ণ এবং ঘর্মাক্ত পরিস্থিতি বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রাক বর্ষার ঘূর্ণিঝড়: 
গ্রীষ্মকালীন দীর্ঘমেয়াদি আবার পূর্বাভাস ২০২০ জানানো হচ্ছে যে, এই বছর এখনো পর্যন্ত ইন্ডিয়ান ওশিয়ানিক ডাইপোল মধ্যম (Neutral) প্রকৃতির থাকায়, বঙ্গোপসাগরে জলের তাপমাত্রা খুব একটা বেশি বৃদ্ধি পায়নি। সময়ের সাথে সাথে ইন্ডিয়ান ওশিয়ানিক ডাইপোল ধনাত্মক (positive) হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় আরব সাগরীয় অঞ্চলের জলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে যথেষ্ট বেশি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

এবছর বর্ষার ঘূর্ণিঝড় এর ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগরে তুলনায় আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় হওয়ার প্রবণতা কিছুটা হলেও বেশি থাকবে। 
সমগ্র আবহাওয়া পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বর্তমান পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে জানানো হচ্ছে যে এবছর বঙ্গোপসাগরে কমপক্ষে ১ টি এবং আরব সাগরে কমপক্ষে ২ টি ঘূর্ণিঝড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে ঘূর্ণিঝড়ের গতি-প্রকৃতি নিয়ে এখনই কিছু বলার সময় আসেনি।

তবে যেখানেই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হোক না কেন তা বর্ষার আগে এলে অবশ্যই বর্ষা অর্থাৎ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু কে কে প্রভাবিত করতে পারে বলে জানানো হচ্ছে।

সব মিলিয়ে এই বছর গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া পরিস্থিতি হয়ে উঠতে পারে অন্যান্য বছরের থেকে কিছুটা হয়তো আলাদা। আর এই গ্রীষ্মকালে জলবায়ু পরিবর্তনের সুনির্দিষ্ট কিছু ছাপ এবার থেকে দেখতে পাওয়া যাবে বলেও মনে করা হচ্ছে ওয়েদার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এ তরফ থেকে।


⬛ গ্রীষ্মকালীন দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়ার পূর্বাভাস ২০২০ বিভিন্ন ধরনের জলবায়ু এবং আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ এবং পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে করা হলো। 
⚫ আবহাওয়া এবং জলবায়ুর সদা পরিবর্তনশীল। তাই সময়ের সাথে সাথে প্রাকৃতিক কারণে এই আবহাওয়ার পূর্বাভাস পরিবর্তিত হতে পারে।


By P.Ghosh
Senior Meteorologist
Weather of West Bengal

Update: 08/03/2020




No comments:

Post a Comment

Weather Prediction Model

Comming Soon......