ভারতের মৌসুমী বায়ুর আগমনের বড়সড় রদবদল।
বর্ষা অর্থাৎ দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আগমনের সময় হয়ে এসেছে। প্রত্যেক বছরই মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে শুরু করে। সম্পূর্ণ দেশে মৌসুমী বায়ু ছড়িয়ে পড়তে প্রায় জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ হয়ে যায়।
প্রথমে আন্দাবান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রবেশ করলেও ভারতের মূল ভূখন্ড বলতে কেরালাতে প্রথম প্রবেশ করে মৌসুমী বায়ু অর্থাৎ বর্ষা। তারপর ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে শুরু করে দুটি ভাগে। একটি আরব সাগরের শাখা এবং অন্যটি বঙ্গোপসাগরীয় শাখায়।
এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগরীয় শাখাটি উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রবেশ করে এবং ধীরে ধীরে বাংলাদেশসহ পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে যায় জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে।
আবহাওয়া সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পেতে ক্লিক করুন আমাদের ফেসবুক পেজে।
কেরলে বর্ষা প্রবেশ করে সাধারণত তিরিশে মে থেকে পয়লা জুন এর মধ্যে। এবং তারপর ধীরে ধীরে এগোতে থাকে বর্ষা, পশ্চিমবঙ্গে তাপমাত্রা আরও এক সপ্তাহ সময় নিয়ে নেয়। পশ্চিমবঙ্গের বর্ষা নির্ঘণ্ট অনুযায়ী 8 থেকে 10 জুনের মধ্যে বর্ষা প্রবেশ করে।
এইভাবে ধীরে ধীরে সে আরো বাকি অংশগুলোতে প্রবেশ করে যায় বর্ষা এবং 15 জুন থেকে পয়লা জুলাই এর মধ্যে বর্ষা দিল্লিসহ দেশর ৯৫ শতাংশ অঞ্চলে বর্ষা প্রবেশ করে যায়।
বর্ষার এই নির্ঘণ্ট ও তৈরি করা হয়েছিল সেই ব্রিটিশ আমল থেকে যা এতদিন ধরে চলে এসেছে। আর এই নির্ঘণ্ট তৈরি হয়েছিল তখনকার 30-40 বছরের পর্যবেক্ষণ এর উপর নির্ভর করে।
কিন্তু বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে বর্ষারে নির্ঘণ্ট ও খুবই ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয়েছে গত কয়েক দশক ধরে। তার ফল স্বরূপ গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা ভারতে এবং পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করতে দেরি করছে সেই পুরনো নির্ঘণ্ট ও অনুযায়ী।
যদিও বর্ষার এই বিলম্বের কারণে দীর্ঘ বছর যাবত জলবায়ু পরিবর্তন কি দায়ী করা হচ্ছে প্রধানত।
গত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছিল যে বর্ষা সঠিক সময় থেকে বহু সময় দেরিতে বা বিলম্ব করে প্রবেশ করছে ভারতে। কখনো কখনো দেখা গেছে সঠিক সময়ের এক থেকে দুই সপ্তাহ দেরিতে প্রবেশ করেছে বর্ষা।
সে ক্ষেত্রে দেখা গেছে বর্ষা পশ্চিমবঙ্গে গতবছর প্রবেশ করেছে একুশে জুলাই। যার সঠিক সময় থেকে বহুগুণ দেরিতে, এবং কেরলে বর্ষা প্রবেশ করেছিল 8ই জুন নাগাদ।
আবহাওয়া সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পেতে ক্লিক করুন আমাদের ফেসবুক পেজে।
এমনই গত কয়েক দশক ধরে লক্ষ্য করা গেছে যে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতে প্রবেশ করতে অতি কাংস্য ক্ষেত্রেই সঠিক সময় থেকে দেরি করে এসেছে।
এতদিন ধরে যে সমস্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা মৌসুমী বায়ুর প্রবেশের নির্ঘণ্ট ও মেনে এসেছিলাম তা ছিল ১৯০১ থেকে ১৯৪০ সালের তথ্যের ভিত্তিতে।
কিন্তু বর্তমানে ১৯৬১ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই নির্ঘণ্ট ও তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গেছে ভারতের মৌসম ভবনের বিজ্ঞানীদের তরফ থেকে।
আবহাওয়া সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পেতে ক্লিক করুন আমাদের ফেসবুক পেজে।
তবে ব্যতিক্রম অনেক ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গেছে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ক্ষেত্রে তবে তা তুলনামূলক অনেক কম।
বর্তমান সূচি অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে যে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু অর্থাৎ বর্ষা ভারতের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশের দিন খুব বেশি পরিবর্তন না হলেও মৌসুমী বায়ু প্রবেশের পথের কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। আবার উত্তর ভারতে মৌসুমী বায়ু প্রবেশের ক্ষেত্রেও খুব বেশি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি।
তবে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে পূর্ব ভারত মধ্য ভারতের উত্তর-পূর্ব ভারতে মৌসুমী বায়ু প্রবেশের সময় কালের ক্ষেত্রে।
সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে মৌসুমী বায়ু প্রবেশ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিলম্বিত দেখানো হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে কলকাতাতে মৌসুমী বায়ু প্রবেশের স্বাভাবিক সময় অনুযায়ী ৮ জুন থেকে ১০ জুনের মধ্যে। তবে বর্তমানে তা পরিবর্তিত হয়ে ১৩ ই জুন থেকে ১৫ জুন করা হয়েছে।
আবার উত্তর-পূর্ব ভারতে মৌসুমী বায়ু প্রবেশের সময় কালকে অপরিবর্তিত করে আরো পাঁচ দিন পিছিয়ে ৫ ই জুন করা হয়েছে।
অপরদিকে ঝাড়খন্ড মধ্যপ্রদেশ উত্তর প্রদেশ বিহার সহ মধ্য ভারতের একটি বড় অংশে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু যেখানে ১৫ই জুনের মধ্যে প্রবেশ করত সেখানে তা আরো বিলম্বিত করে ২০ই জুন করা হয়েছে।
কিন্তু বর্ষা প্রবেশের শেষ পর্যায়ে, দেখা যাচ্ছে যে সময়ের কিছুটা আগেই পরিপূর্ণভাবে সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়ছে রাজস্থান এবং পাঞ্জাব হয়ে, এবং বাকি অংশ গুলিতেও পহেলা জুলাই এর মধ্যে 100% সম্পূর্ণ করছে। যেখানে আগে 15 জুলাই পর্যন্ত লেগে যেত বর্ষা প্রবেশ করতে ভারতের যে সমস্ত স্থানে, রাজস্থানের সেই সমস্ত স্থানগুলিতে বর্ষা পয়লা জুলাই এর মধ্যে প্রবেশ করে যাচ্ছে।
সে ক্ষেত্রে বলা যায় যে মধ্যভারতের ক্ষেত্রেই বর্ষার প্রবেশের বিলম্বিত করাকে তুলে ধরা হয়েছে।
আবহাওয়া সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পেতে ক্লিক করুন আমাদের ফেসবুক পেজে।
এই পরিবর্তন শুধুমাত্র বর্ষার প্রবেশের ক্ষেত্রে নয়, বর্ষার গমনের ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখানো হয়েছে।
বর্ষার গমনের ক্ষেত্রে রাজস্থান থেকে প্রথম বিদায় নিতে শুরু করে ১লা সেপ্টেম্বর থেকে। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় এবং চতুর্থ সপ্তাহ হয়ে যাচ্ছে বর্ষার বিদায় শুরু হতে। এমন কি পশ্চিমবঙ্গ থেকেও যার জন্য অনেকটাই দেরি করে বর্ষা বিদায় নিচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। বর্ষা আগে নিয়ম অনুযায়ী বিদায় নিতে ৮ই অক্টোবরের আশপাশে। কিন্তু তা বর্তমানে তা বিলম্বিত হয় ১৫ ই অক্টোবর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্ষার চরিত্রের এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ভারতের জলবায়ু এবং আবহাওয়ার ক্ষেত্রে যেমন বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে তেমন কৃষি ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসতে চলেছে।
তবে কি সেই পরিবর্তন বা সেই পরিবর্তনের প্রভাব কতটা এবং কিভাবে পড়তে পারে তা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
এই পরিবর্তন শুধুমাত্র বর্ষার প্রবেশের ক্ষেত্রে নয়, বর্ষার গমনের ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখানো হয়েছে।
বর্ষার গমনের ক্ষেত্রে রাজস্থান থেকে প্রথম বিদায় নিতে শুরু করে ১লা সেপ্টেম্বর থেকে। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় এবং চতুর্থ সপ্তাহ হয়ে যাচ্ছে বর্ষার বিদায় শুরু হতে। এমন কি পশ্চিমবঙ্গ থেকেও যার জন্য অনেকটাই দেরি করে বর্ষা বিদায় নিচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। বর্ষা আগে নিয়ম অনুযায়ী বিদায় নিতে ৮ই অক্টোবরের আশপাশে। কিন্তু তা বর্তমানে তা বিলম্বিত হয় ১৫ ই অক্টোবর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্ষার চরিত্রের এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ভারতের জলবায়ু এবং আবহাওয়ার ক্ষেত্রে যেমন বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে তেমন কৃষি ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসতে চলেছে।
তবে কি সেই পরিবর্তন বা সেই পরিবর্তনের প্রভাব কতটা এবং কিভাবে পড়তে পারে তা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
By P.Ghosh
Senior Chair Person
WOWB
UPDATE: 09:00 PM IST
17/04/2020
No comments:
Post a Comment