ফিরে দেখা ফনি, ঘূর্ণিঝড়ের এক বছর। - Weather of West Bengal

My weather, my bengal.

Sunday, May 03, 2020

ফিরে দেখা ফনি, ঘূর্ণিঝড়ের এক বছর।



৩রা মে, আজকের এই দিনটা আবহাওয়াবিদদের কাছে এবং সাধারণ মানুষের কাছে খুবই পরিচিত। কারণ আজকের দিনেই অতি প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফনি আছড়ে পড়ে ঠিক এক বছর আগে।
ঘূর্ণিঝড় ফণী ১ বছর পূর্ণ হল। কারণ গত বছর এই তারিখেই উড়িষ্যার পুরী উপকূলে প্রথম আছড়ে পরে এই ঘূর্ণিঝড়। নাম ঘূর্ণিঝড় ফণী। বাংলাদেশের দেওয়া এই নাম এর অর্থ হল সাপ বা সাপের ফণা।

২২শে এপ্রিল বঙ্গোপসাগরের নিরক্ষীয় অঞ্চল বরাবর ঝন্ঝা বর্ত তৈরি হয়। সেই ঝঞ্ঝা বর্ত ক্রমে ২৪ শে এপ্রিলের মধ্যে নিম্নচাপ এবং সুস্পষ্ট নিম্নচাপের রূপ ধারণ করে। সেই নিম্নচাপ পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপ এবং ২৭ এপ্রিলের মধ্যে তা অতি গভীর নিম্নচাপের আকার নেয়।
তারপর তা ধীরে ধীরে উত্তর উত্তর-পশ্চিম মুখি হতে শুরু করে।
২৮ এপ্রিল সে শক্তি বৃদ্ধি করে প্রথম ঘূর্ণিঝড়ে (Cyclonic Storm) রূপ নেয় এবং উত্তর উত্তর পশ্চিম মুখী হয়ে এগোতে থাকে।
এইভাবে এগোতে এগোতে ১লা মে সে দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলের কাছাকাছি আছে। ততদিনে ঘূর্ণিঝড় আরো শক্তি বৃদ্ধি করে প্রবল ঘূর্ণিঝড় (Severe Cyclone) এবং অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে (Very Severe Cyclone) পরিণত হয়েছে। তারপর সেই ধীরে ধীরে উত্তর এবং উত্তর পূর্বমুখী হয়ে, পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টায় সে তার নিজের শক্তি আরো অনেকগুণ বৃদ্ধি করে অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে (Extremely Severe Cyclone) পরিণত হয় এবং ৩রা মে দক্ষিণ ওড়িশার পুরী উপকূলে আছড়ে পড়ে।

গভীর নিম্নচাপ (Depression formation) অবস্থায় ফণী

৩রা মে সকাল ৭ টা থেকে ১০টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের চোখ (Eye of the Cyclone) পুরীর উপর দিয়ে স্থলভাগের প্রথম প্রবেশ করে।
ঘূর্ণিঝড় প্রথম পুরি উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় তার বাতাসের গতিবেগ ছিল, ২২০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা যা তিন মিনিট স্থায়ী, এবং সর্বোচ্চ দমকা হাওয়ার গতি ছিল ২৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা যা এক মিনিট স্থায়ী ছিল।
এই প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ফনি উড়িষ্যার উপকূলবর্তী অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সাথে প্রবল দুর্যোগ ঘটায়। যদিও শুধুমাত্র এই দুর্যোগ পুরীতে সীমাবদ্ধ ছিল না সমগ্র উত্তর উড়িষ্যা জুড়ে ব্যাপক দুর্যোগ ঘটায়।

তারপর ধীরে ধীরে ঘূর্ণিঝড় ফনি উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে থাকলে, ঘূর্ণিঝড় ফণী স্থলভাগের উপর দিয়ে উত্তর উড়িষ্যা ঝাড়খণ্ডের সীমান্তবর্তী অঞ্চল হয়ে পরবর্তী ১২ ঘন্টায় পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর দিয়ে প্রবেশ করে।

ঘূর্ণিঝড় ফনির সম্পূর্ণ গতিবিধি।

কিন্তু স্থলভাগে প্রবেশ করার কারণে, জলীয় বাষ্প যথাযথ জোগাড় না হওয়ার কারণে, এবং উত্তর পশ্চিম ভারত থেকে আগত শুষ্ক বাতাসের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি অনেক গুণ হ্রাস পায়।
ঘূর্ণিঝড় যতক্ষণে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে ততক্ষনে ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি অতি গভীর নিম্নচাপ সমতুল্য শক্তিতে পরিণত হয়েছিল প্রায়।

তারপর ধীরে ধীরে সেটি এক রাতের মধ্যেই বাংলাদেশে প্রবেশ করে যায় ৪ঠা যে এর মধ্যে।
ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর খুব বেশি ধ্বংসলীলা চালিয়ে যেতে পারেনি।
ঘূর্ণিঝড় টি শক্তি ততদিনে অনেক কমে যাওয়ায় সাধারণ নিম্নচাপে পরিণত হয় এবং ঘন্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়ার সাথে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত ঘটায় বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল সহ উত্তর পূর্ব ভারতের বেশ কিছু অঞ্চলে।

ঘূর্ণিঝড় ফনী আছড়ে পড়ার সময় রাডার ইমেজ, যে ছবিতে স্পষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে থাকা চোখ পুরির ওপরে।

এখনো পর্যন্ত রেকর্ড হওয়ার অনুযায়ী তথ্য বলছে যে এই ঘূর্ণিঝড় ফনি তার সর্বনিম্ন বায়ুর চাপ রেকর্ড হয়েছে এখনো পর্যন্ত ৯২৫ মিলিবার।
যা অত্যন্ত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার জন্য উপযুক্ত।
এপ্রিল মাসের ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা এই ঘূর্ণিঝড় খুবই উল্লেখযোগ্য তার কারণ, এই ঘূর্ণিঝড় নিরক্ষীয় অঞ্চলে সম্পূর্ণ কাছ থেকে তৈরি হয়েছিল নিম্নচাপ রূপে। এবং খুব সহজেই এই ঘূর্ণিঝড় শক্তি বৃদ্ধি করে এত ভয়ানক ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে সক্ষম হয়েছিল।
বাস্তবিক পক্ষে তার আগের রেকর্ড এ ঘূর্ণিঝড় ফণির মতো এতো শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় এপ্রিল মাসের তৈরি হওয়ার নিরিক নেই।
ঘূর্ণিঝড় নার্গিস ও নিরক্ষরেখা থেকে অনেকটাই উপরের দিকের অঞ্চলে তৈরি হতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু এই ঘূর্ণিঝড় ফনি নিরক্ষীয় অঞ্চলের এত কাছ থেকে তৈরি হওয়ায় বিশেষ ঘূর্ণিঝড়ের মর্যাদা পায়।

কারণ সাধারণত নিরক্ষীয় অঞ্চলের থেকে ৫ ডিগ্রি অক্ষাংশ পর্যন্ত কোন রকম শক্তিশালী সিস্টেম তৈরি হতে সক্ষম হয় না। এ মতো পরিস্থিতিতে এই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়া সত্যি অবাক করার মত বিষয়।
আর এই ঘূর্ণিঝড় ফনী আছড়ে পড়ার এক বছর পরেও তার ক্ষত উড়িষ্যার পুরী সহ বিভিন্ন অঞ্চল বয়ে বেড়াচ্ছে। আর তারই মধ্যে ফের বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের তৈরীর আশঙ্কা সকল মানুষের উদ্বেগ আরো বৃদ্ধি করে দেয়।

ঘূর্ণিঝড় ফনির সমস্ত গতিপথ এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য বিশ্লেষণ এবং নজরদারি রেখে চলেছিল ওয়েদার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের টিম। ওয়েদার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর তরফ থেকে ঘূর্ণিঝড় ফনির সঠিক পূর্বাভাস দিতে তবেই সক্ষম হয়েছিল। তাই ধন্যবাদ ওয়েদার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর টিমকে।

By P.Ghosh
Sinior meteorologist WOWB
Update: 03/05/2020

No comments:

Post a Comment

Weather Prediction Model

Comming Soon......