২২ তারিখ রাতে হঠাৎ করেই কিছু সুনামধন্য মিডিয়াথেকে শুরু করে সদ্য গজিয়ে ওঠা বেশ কিছু পেজে প্রকাশিত একটি খবর নিয়ে রীতিমতো শুরু হয়ে যায় বিভ্রান্তি ও তৈরি হয় অসস্তি। খবরটি হলো আবার নতুন করে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বঙ্গোপোসাগর , ওড়িশা উপকূল ও সংলগ্ন এলাকায়। ওড়িশা ও সংলগ্ন এলাকায় ঘনীভূত হচ্ছে ঘূর্ণাবর্ত। তিনদিনে সেই ঘূর্ণাবর্তের প্রকৃতি কোন দিকে যাচ্ছে সেটা বোঝা যাবে। বোঝা যাবে কতটা শক্তিশালী হয়ে উঠবে। আর সবথেকে বড়ো কথা বেশ কিছু মিডিয়া প্রকাশিত তথ্যে খোদ মৌসম ভবনের তথ্যসূত্র থেকে পেয়েছে নিউজটি এটাও শোনা যাচ্ছে। বেশ কিছু মিডিয়া রঙ চড়িয়ে " ফের ঘূর্ণিঝড়ের ভ্রুকুুটি" বা "তাহলে কি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে ঘূর্ণাবর্ত" এসব প্রচার করে আরোই বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে আমবাঙালির মধ্যে। এবার ওয়েদার অফ ওয়েস্টবেঙ্গলের তরফ থেকে আমি অর্ঘ্য বটব্যাল তুলে ধরছি আসল ঘটনা কী লুকিয়ে আছে?? আদৌ কি কোনো ঘূর্ণিঝড় তৈরি হবে আসন্ন দিনে ?? আগে বিগত ৪৮ ঘণ্টার পরিস্থিতি তুলে ধরি। একটি ঘূর্ণাবর্ত ৪৮ -৭২ ঘণ্টা আগে তৈরি হয়েছিল উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে। অপর একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছিল ঝাড়খণ্ড ও সংলগ্ন এলাকায়। এই ঘূর্ণাবর্ত বেশ কিছুটা শক্তিশালী হয়ে ওড়িশা ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করতে থাকে। এই ঘূর্ণাবর্ত ও এরসঙ্গে যুক্ত অক্ষরেখার প্রভাবে মাঝে মাঝেই বৃষ্টি নেমেছে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায়। আকাশ আংশিক থেকে প্রধানত মেঘলা ছিল। বর্তমানে এই ঘূর্ণাবর্ত ওড়িশা অতিক্রম করে ছত্তিশগড় ও সংলগ্ন এলাকার উপর অবস্থান করছে। (২৩.৬.২০ রাত ২.১৯ মিনিট)। এই ঘূর্ণাবর্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরও উত্তর পশ্চিম দিকে সরে যাবে। এবং আস্তে আস্তে দুর্বল হতে থাকবে। ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে মধ্যভারত ও সংলগ্ন এলাকায় ২৪-৩৬ ঘন্টায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই ঘূর্ণাবর্ত থেকে কোনো রকম ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা নেই। এবং আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়বে এবং অক্ষরেখার সাথে মিশে যেতে পারে। সাধারণত কোনো ঘূর্ণাবর্ত সাগরে থাকলে তবেই শক্তিশালী হয়ে নিম্নচাপ ও পরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। কারণ জলীয় লীনতাপ ও অন্যান্য অনুঘটকের সাহায্যে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আবার একাধিক সক্রিয় অনুঘটক থাকলে তবেই সাগরে শক্তিশালী হতে পারে। নাহলে সাগরে থাকলেও যথেষ্ট শক্তিশালী হতে পারে না। তাই সব ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় হয়না। অন্যদিকে প্রয়োজন দীর্ঘ জলপথ পেরোনোর সময় দীর্ঘ সময় জলে থাকা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মামুলি ঘূর্ণাবর্ত স্থলভাগ অতিক্রম করে ছত্তিশগড় ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে পরে আরো সরে যাবে। তাই এই ঘূর্ণাবর্ত থেকে ঘূর্ণিঝড় হওয়া মোটেও সম্ভব নয়। তবে বর্ষাকালে কিছু লঘুচাপ হয় যেগুলো স্থলের মধ্যেই শক্তিশালী হয়ে কোনো কোনো সময় সুষ্পষ্ট নিম্নচাপ বা খুব বেশি ডিপ্রেশনে পরিণত হয়। তবে ঘূর্ণিঝড়ে মোটেও পরিণত হয়না। তবে প্রদত্ত ঘূর্ণাবর্তটি এসবেও পরিণত হবেনা। ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যেতে পারে বা অক্ষরেখার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে। অন্যদিকে বঙ্গোপোসাগরে বেশ কিছু অনুকূল পরিবেশ থাকলে তবেই শক্তিশালী নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। যার মধ্যে উচ্চ সমুদ্র জলতাপমাত্রা, নিম্ন উলম্ব উইণ্ড শেয়ার, অনুকুল এম জে ও , উচ্চ পরিচলন স্রোত , শক্তিশালী বায়ুর ঠেল না থাকা। বর্তমান পরিস্থিতি বিচার করলে দেখা যায় উচ্চ সমুদ্র জলতাপমাত্রা থাকলেও স্ট্রং উইণ্ড শেয়ার থাকায় সিস্টেম সুগঠিত ও শক্তিশালী হতে দেবে না। ফলে গভীরতর নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের পরিস্থিতি বর্তমানে নেই। অন্যদিকে এম জে ও বঙ্গোপোসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় তেমন একটা অনুকূল থাকবে না। তবে মৌসুমী সার্জ ও সামুদ্রিক ঘূর্ণাবর্ত হতে পারে বঙ্গোপসাগরে যেটা স্বাভাবিক ব্যাপার। সবথেকে বড়ো কথা মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে কোনো ঘূর্ণাবর্ত সমুদ্রে বেশিক্ষণ বর্তমানে স্থায়ী হতে পারছেনা। তাই ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা এখন অতীত। আর বর্ষাকালে ঘূর্ণিঝড় এই কারণে হয়না তেমন। একমাত্র ব্যতিক্রম ঘূর্ণিঝড় কোমেন।
তাই বলা যায় মোটের উপর আগামী ৭-১০ দিন কম করে বঙ্গোপোসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় কোনো ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা নেই। পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ সহ পূর্ব ভারতের উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মুক্ত থাকবে কম করে ৭-১০ দিন। এমনিও বর্ষার সময় সাগরে গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হলেও ঘূর্ণিঝড়়ের প্রবণতা ভরা বর্ষায় কম থাকে। ৭-১০ দিন গভীর নিম্নচাপের সম্ভাবনাও কম। তাই নিরাপদে চিন্তাহীন থাকুুন
। অযথা তাই ভয় পাবেন না। ঘূর্ণিঝড়ের গুজব ছড়াবেন না আর এই সমস্ত গুজব শোনা থেকে বিরত থাকুন। কিছু মিডিয়া ফুটেজ খাওয়ার জন্য , কিছু পেজ ভিউ পেতে এইসব গুজব ছড়ায়। পূর্বাভাস জানতে এই সমস্ত মিডিয়া বা নিউজ রিপোর্টের থেকে স্বীকৃত আবহাওয়া দপ্তর অনুসরণ করুন বা স্বীকৃত ও নির্ভরযোগ্য
পেজ ফলো করুন। ওয়েদার অফ ওয়েস্টবেঙ্গল আপনাদের সাথে আছে।
পূর্বাভাস প্রদানকারী: অর্ঘ্য বটব্যাল।
তারিখ: ২৩.৬.২০
সকাল: ৭.৩০ মিনিট।
No comments:
Post a Comment