যদি ঋতুরাজ বসন্ত হয় তাহলে ঋতুরাণী হলো শরৎ। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের সঙ্গে দুর্যোগের যেন মেলবন্ধন ঘটে শরৎকালে। "আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে ওঠে আলোকমঞ্জির, ধরনীর বহিরাকাশে অন্তরীত মেঘমালা"। ভাদ্র মাস থেকেই ধীরে ধীরে প্রকৃতি সেজে উঠতে শুরু করে শারদীয়ার আবাহনের জন্য। আর মাত্র ১৫-২০ দিন পর থেকেই শরতের আবাহনের মূল পর্বের সূচনা হতে শুরু করবে। নদীর পাড়ে দেখা মিলবে কাশফুল, দীঘিতে আবির্ভাব হবে শালুক ও পদ্মের। একমাসের মধ্যেই নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে আসতে চলেছে ঋতুরাণী শরৎ। যদিও বর্ষাবিদায় পর্ব থেকেই আবহাওয়াবিদদের খাতায় কলমে শরৎ হাজির হয়। সেক্ষেত্রে দুমাস বাকি খাতায় কলমে শরৎ আসতে কিন্তু তাও শরৎ আসার নির্ঘট ধীরে ধীরে আসন্ন হচ্ছে। অলিখিত ভাবে শরতের আবাহন আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে। শুরু হতে থাকবে পূজা পূজা অনুভূতি। বর্তমানে নীল আকাশে সাদা মেঘের উপস্থিতি শরতের একটা প্রারম্ভিক অনুভূতি নিয়ে আসছে ঠিকই চোখের অগোচরেই চলছে ঋতুরাণীকে বরণ করার সাজগোজ। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যেই তা আরো প্রকট হয়ে উঠবে। নীল আকাশ, সাথে বজ্রগর্ভ মেঘের সঞ্চার হয়ে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি। পড়ন্ত সূর্যের আলোতে লাগছে আরো রক্তিমতা, যা আসন্ন দিনে আরো প্রকট হবে। এবার শরৎকাল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। সূর্যের দক্ষিণায়ণের প্রভাবে আই টি সি জেট অঞ্চল দক্ষিণে নামতে থাকে। ২১ জুনের পর থেকেই সূর্য ধীরে ধীরে দক্ষিণমুখী হয়। ২২ সেপ্টেম্বর নাগাদ সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্ভভাবে কিরণ দেয়। তার জন্য বায়ুচাপ বলয়ের তারতম্য হতে শুরু করে। এবং পরবর্তীতে সূর্ররশ্মি আরো দক্ষিণ দিকে লম্বভাবে কিরণ দিতে থাকে। তার জন্য উত্তর পশ্চিম ভারতের উপর উচ্চচাপ বলয় তৈরি হয়। এবং দিন দিন শক্তিশালী হতে থাকে। তার জন্য উত্তর পশ্চিম ভারতের উপর ও এর আর এর মান বাড়াতে থাকে। যার কারণে উত্তর পশ্চিম ভারতের উপর পরিষ্কার আবহাওয়া ও উত্তর পশ্চিমা বাতাস প্রাধান্য পায়। এবং পরবর্তীতে উত্তর পশ্চিমা বাতাস আরও তীব্র হয়ে মধ্য ভারত ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের দিকে নেমে আসে। ধীরে ধীরে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের মেঘের অভিমুখ, আদ্রতা ও উষ্ণতার পরিবর্তন ঘটে এবং অক্টোবরের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও সংলগ্ন রাজ্যগুলি থেকে বিদায় নেয় দ প মৌসুমী বায়ু। শুরু হয় খাতায় কলমে শরৎকাল। সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে উত্তর পশ্চিম ভারতের উপর থেকে মৌসুমী বায়ু বিদায় নেয়। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যেই মৌসুমী অক্ষরেখা নষ্ট হয়ে যায়। শরৎকালে কেবলমাত্র উষ্ণ ও আর্দ্র বাতাস ও শুষ্ক শীতল বাতাসের ঘর্ষণের ফলে বজ্রবিদ্যুত সহ বৃষ্টি হয় স্থানীয় ভাবে। আসা করা যায় আর দেড় মাসের মধ্যেই উত্তর পশ্চিম ভারত থেকে মৌসুমী বায়ু বিদায় নিতে শুরু করবে। অন্যদিকে শরৎকালে মিশে থাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি দুর্যোগ। যেহেতু দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকার সমুদ্র উষ্ণ থাকে। এবং ঐ অঞ্চলে বায়ুশূন্য স্থান ও উষ্ণ আদ্র সামুদ্রিক বাতাস ও শুষ্ক বাতাসের ঘর্ষণ হয়। তৈরি হয় বড়ো বড়ো সামুদ্রিক দুর্যোগ ও ঘূর্ণিঝড়। এছাড়া স্থানীয় বজ্রগর্ভ মেঘের সঞ্চারে বৃষ্টির পাশাপাশি প্রবল বজ্রপাত থাকে । তাই বজ্রপাত জীবনহানি ঘটায়। সামগ্রিক ভাবে বলা যায় বর্ষার আবরন ভেদ করে ধীরে ধীরে শরতের হাতছানি শুরু হয়েছে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যেই আরো প্রকট হবে শরৎকালীন আমেজ। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসবে বাঙালির উৎসবের ঋতু শরৎ। আর সাথে বাজবে "ওগো আমার আগমনী, আলো..."। ধীরে ধীরে বরণ করে নেব শরৎকালকে মহালয়ার মধ্য দিয়ে হাতে আর মাত্র ৬০-৬২ দিন বাকি। প্রকৃতি ধীরে ধীরে শারদীয়ার আবাহনের প্রস্তুতি শুরু করছে।
৫.৮.২০২১(Weather of Westbengal team)
No comments:
Post a Comment