নিজস্ব সংবাদদাতা: সমগ্র দক্ষিণবঙ্গে চলছে ভীষণ কনকনে ঠান্ডা। দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে গেছে ১০°সে ও তার নীচে ৫ জানুয়ারি ২০২৩ সকালে। হাওড়া জেলার আমতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৫ জানুয়ারি সকালে ১১°সে ও উলুবেড়িয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১১°সে। সাথে রয়েছে তীব্র উত্তরে বাতাস।
আসুন ব্যাখ্যা দেওয়া যাক কেন শীতটা ভীষণ?
প্রথম কথা বিগত ৪৮-৭২ ঘন্টা ধরে এক নাগাড়ে উত্তরে বাতাস প্রবাহিত হয়ে চলেছে যা বন্ধ হয়নি। এবং সমমাত্রায় উত্তরে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। তারজন্য বিগত ২৪ ঘন্টায় তাপমাত্রা যদি ১০-১৩°সে চলে আসে তাহলে আগামী ২৪ ঘন্টায় আরো তাপমাত্রা কমবে। যদি ৫ জানুয়ারি ২০২৩ সকালে ১০-১২°সে তাপমাত্রা রেকর্ড হয় তাহলে ৬ জানুয়ারি ২০২৩ সকালে আরো তাপমাত্রা হ্রাস পাবে। কারণ উত্তরে বাতাসকে কমানোর মতো নিম্নচাপ, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা বা ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হবার সম্ভাবনা নেই।
মডেল ১১°সে সব যায়গায় দেখাচ্ছে মানে সব অঞ্চলে ১১°সে রেকর্ড হবে তার কোনো মানে নেই। আজ যেখানে ১১°সে রেকর্ড হয়েছে কাল আরো কমে যাবে। মডেল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা তুলে ধরে তাই মডেল প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়ে থাকে। মডেলে একটি পরিবর্তনশীল সাধারণীকরণ ধারণা দেয়। যেমন জাঁকিয়ে শীত অনুভূত হবে তাপমাত্রা থাকতে পারে ১১°সে আশেপাশে তারমানে এই নয় তাপমাত্রা ১১°সে থাকবে। কতটা বাড়বে বা কমবে তা বিচার করে বর্তমান আবহাওয়া পরিস্থিতির উপর। তাই মডেলকে অনুসরণ করো অনুকরণ নয়। আর ওয়েদার সাইটের বর্তমান তাপমাত্রা যেটা দেখায় সেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মডেল বেসড হয় তাই কোনো ওয়েদার সাইটে ১৭°সে দেখাচ্ছে মানে সেখানের তাপমাত্রা ১৭°সে এটা নয়। সেখানের বাস্তব তাপমাত্রা ১৫ এমনকি ১৩°সে হতেও পারে। তাই বর্তমান তাপমাত্রা সবসময় রেকর্ডেড তাপমাত্রা হয়ে থাকে যা পাওয়া যায় একমাত্র আই এম ডি বা নিজস্ব মেশিন থাকলে তবেই। ওয়েদার অফ ওয়েস্টবেঙ্গল সবসময় নিজস্ব মেশিনের টেম্পারেচার ও আই এম ডি অবসারভড বর্তমান টেম্পারেচারের উপরেই নির্ভর করে। ওয়েদার সাইটের টেম্পারেচার নয়।
দ্বিতীয়ত সর্বনিম্ন স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে ৩-৫°সে তাপমাত্রা পতন হলে তাকে কোল্ড ওয়েভ বা শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। আবার ১০-১২°সে তাপমাত্রার পতন ও তার নীচে নেমে যাওয়া এই ঘটনাকে ওয়েদার অফ ওয়েস্টবেঙ্গল কোল্ড ওয়েভ বা ভেরি কোল্ড ওয়েদার বলে বিচার করে থাকে ওয়েদার অফ ওয়েস্টবেঙ্গল। তারজন্য ১০-১২°সে ও তার নীচে তাপমাত্রা নামলেই আমরা কোল্ড ওয়েভ ও ভেরি কোল্ড ওয়েদার দিয়ে থাকি। বর্তমান শীতের স্পেলে দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ যায়গায় ১০-১২°সে ও তার নীচে তাপমাত্রা নেমে গেছে যা কোল্ড ওয়েভ এবং আই এম ডি স্কেল অনুযায়ী আইসোলেটেড কোল্ড ওয়েভ ও ভেরি কোল্ড ওয়েদার চলছে যা আগামী দিনে আরো বিস্তৃত হবে। তাই ভয়াবহ ঠাণ্ডার বলাই যায় বর্তমান ঠাণ্ডার স্পেলকে। তৃতীয়ত বর্তমান শীতের স্পেল ২০২২-২৩ শীতের মরশুমের এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী কনকনে শীতের স্পেল হবে। আগামী ৭-৮ দিন সমমানের ঠাণ্ডা চলবে দক্ষিণবঙ্গে বরং ঠাণ্ডা আরো বাড়বে। যার কারণে সমগ্র দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে জাঁকিয়ে ঠাণ্ডা অনুভব হবে। এর কারণ হিসেবে বলা যায় উত্তর পশ্চিম ভারতে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এলেও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের শীতকে খর্ব করবেনা। এছাড়াও বঙ্গোপসাগরে উচ্চচাপ বলয় যা শীতকে খর্ব করে তার আগামী বেশ কিছুদিন অনুপস্থিতি দেখা যাবে। যার কারণে বর্তমান শীতের স্পেল সহজে ভাঙবে না আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বরং দীর্ঘস্থায়ী একভাবে শীত চলতে থাকায় দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রার আরো পতন হবে। তাই জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে চলা শীত দ্বিতীয় সপ্তাহের মাঝামাঝি বা শেষ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে বলাই যায়। বরং উত্তর পশ্চিম ভারতে এর মধ্যে যে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আসবে তা দক্ষিণবঙ্গের শীতের বন্ধু হবে উত্তর পশ্চিম ভারতে প্রচুর তুষারপাত ঘটিয়ে বেরিয়ে চলে যাবে। তার জন্য উত্তর পশ্চিম ভারত ও ঝাড়খণ্ড থেকে হিমশীতল উত্তরে বাতাস নেমে এসে জম্পেশ শীত অনুভূত হবে সমগ্র দক্ষিণবঙ্গে।
শীতের রিয়েল ফিল (শীত কেন এত বেশি লাগছে):
প্রকৃত পক্ষে গরমের পাশাপাশি শীতেরো বাস্তব অনুভূতি রয়েছে। বর্তমানে চলমান শীতের স্পেলের শুরুতে কুয়াশা বলয় তৈরি হবার কারণে জলীয় বাষ্প থেকে গেছে কিছুটা হলেও যা সয়েল ময়েশ্চারকেও প্রভাবিত করে শিশিরাঙ্ক (Dew point) কে বাড়িয়ে দিয়ে গেছে। এর পাশাপাশি হিমশীতল উত্তরে বাতাস ও থেকে যাওয়া জলীয় বাষ্প একযোগে শীতের অনুভূতি আরো বাড়িয়ে তুলেছে। থেকে যাওয়া জলীয় বাষ্প ঝাপসা আবহাওয়া তৈরি করেছে তাই সূর্যের তাপ সেই মতো গায়ে লাগছে না ফলে চড়া রোদের দেখা নেই। এর পাশাপাশি হিমশীতল উত্তরে বাতাস প্রবাহিত হবার জন্য ভীষণ শীত অনুভূত হচ্ছে বা শীত বেশি গায়ে লাগছে।
এরকম শীত আর কতদিন?
আপাতত শক্তিশালী সিস্টেম নেই যা শীতের বাঁধা তৈরি করতে পারে। আগামী ৭-৮ দিন জাঁকিয়ে প্রচণ্ড কনকনে শীত অনুভূত হবে সমগ্র দক্ষিণবঙ্গে। মরশুমের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সবচেয়ে শক্তিশালী কনকনে শীতের স্পেল বর্তমান শীতের স্পেলটি। আরো ঠাণ্ডা বাড়বে দক্ষিণবঙ্গে।
হাওড়াজেলার কথা কেন টানলাম আগের পোস্টে?
দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য যায়গায় ভীষণ শীত অনুভূত হচ্ছে ঠিকই তবে হাওড়া জেলার জন্য বিশেষ পূর্বাভাস ছিল আগের পোস্টটি তাই সিগনিফিকেন্ট কোল্ড কণ্ডিশন থাকায় হাওয়াকে স্পেশাল কোল্ড অ্যালার্ট দেওয়া হয়েছে। হাওড়া জেলা ঘন কুয়াশা থেকে মুক্ত হয়েছে তারজন্য তাপমাত্রার পতন হার ৫ জানুয়ারি ২০২৩ রাতে আরো বেশী হবে তাই মারাত্মক কনকনে শীত অনুভূত হবে। অন্যদিকে অনুকূল পরিবেশ থাকায় শীতের বাস্তব অনূভুতি বেশি হবে শীত গায়ে বেশি লাগবে। হাওড়া জেলার কথা উল্লেখ করেছি তার পাশাপাশি সমগ্র দক্ষিণবঙ্গেই ৫ জানুয়ারি ২০২৩ রাতে ভীষণ ঠাণ্ডা ও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে।
কেন বর্তমান শীতের স্পেল ভীষণ কনকনে তা ৫ জানুয়ারি ২০২৩ সকালে দক্ষিণবঙ্গের কোথায় কতটা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে দেখলেই বোঝা যাবে এবং মডেলের বাস্তবতা সম্পর্কে ধারণা লাভ হবে। দেখে নিন:
বর্ধমান: ৮.৬°সে
জিয়াগঞ্জ:৯.১°সে
শ্রীনিকেতন:৯.৪°সে
পুরুলিয়া:৯.৮°সে
পানাগড়:১০.৬°সে
আসানসোল:১০.৮°সে
নিউটাউন:১০.৯°সে
আমতা (মেলাইপাড়া):১১.০°সে
উলুবেড়িয়া:১১.০°সে
মগরা -বাগাটি:১১.০°সে
হাবরা:১১.০°সে
বাঁকুড়া:১১.৩°সে
মুকুটমনিপুর:১১.৪°সে
ব্যারাকপুর:১১.৪°সে
খড়্গপু্র:১১.৪°সে
কলাইকুণ্ডা:১১.৬°সে
ক্যানিং:১১.৮°সে
দমদম:১১.৮°সে
মেদিনীপুর:১২.০°সে
কৃষ্ণনগর:১২.২°সে
পূর্বাভাস: ৫ জানুয়ারি ২০২৩ (সন্ধ্যা)
No comments:
Post a Comment