সূর্যরশ্মি বঙ্গোপসাগরের নিম্নাঞ্চলের দিকে লম্বভাবে কিরণ দেওয়ার কারণে প্রচুর পরিমাণে বাস্পীভবণ প্রক্রিয়া হচ্ছে সেই সঙ্গে বায়ুর চাপ কমতে থাকায় ভার্টিক্যাল উইণ্ড শেয়ার বেশি রয়েছে এবং হরাইজন্টাল উইণ্ড শেয়ার কম রয়েছে। আগামী দিনে আরো তাপ বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য বঙ্গোপসাগরের নিম্নাঞ্চল থেকে লো উইণ্ড শেয়ার জোন আরও প্রসারিত হবে এবং ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আরো অনুকূল হবে বঙ্গোপসাগর। বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য আউটগোয়িং লং ওয়েভ রেডিয়েশন কমবে এবং তুলনামূলক ভাবে যেখানে সবচেয়ে বেশি কমে যাবে সেখানেই কনভেকটিভ প্রক্রিয়া বাড়বে এবং ক্রান্তীয় ঝঞ্ঝা তৈরি হবে।
বর্তমান সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা ম্যাপে দেখা যাচ্ছে নিরক্ষীয় ভারত মহাসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা ৩১°সে এর আশপাশে রয়েছে। বাকি অঞ্চলে সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩০°সে এর আশপাশে রয়েছে অর্থাৎ সমগ্র বঙ্গোপসাগর জুড়ে সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির ও ঘূর্ণিঝড়ের শক্তিবৃদ্ধির অনুকূল রয়েছে। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর ও নিরক্ষীয় ভারত মহাসাগর থেকে আগামী দিনে নিম্নচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
বিগত ৭ দিনের সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা হ্রাস বৃদ্ধি চিত্র অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা ০.৪ থেকে ১.৪°সে এর উপর বৃদ্ধি পেয়েছে যা আগামী দিনে আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বঙ্গোপসাগরের নিম্নাঞ্চলে। অর্থাৎ ঘূর্ণিঝড়ের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে।
সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা বিচ্যুতি ম্যাপ অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে সমগ্র দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর জুড়ে সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা ০.৪°সে থেকে ১.৬°সে পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বঙ্গোপসাগরের মধ্যাংশের কোথাও কোথাও বিচ্যুতি ০.০°সে থেকে -০.২°সে হ্রাস পেলেও তা আগামী দিনে বেড়ে যাবে এবং ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে।
বর্তমান ট্রপিক্যাল সাইক্লোন হিট পোটেনশিয়াল এনার্জি ম্যাপ অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে বিগত ১১ দিনে আরবসাগরের তুলনায় বঙ্গোপসাগরে ট্রপিক্যাল সাইক্লোন হিট পোটেনশিয়াল এনার্জি বেশি রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের নিম্নাঞ্চলে সুমাত্রা উপকূল ও নিরক্ষীয় ভারত মহাসাগরে ট্রপিক্যাল সাইক্লোন হিট পোটেনশিয়াল এনার্জি বেশি রয়েছে। আন্দামান সাগরে ট্রপিক্যাল সাইক্লোন হিট পোটেনশিয়াল এনার্জি বেশি রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের বাকি অঞ্চলে ট্রপিক্যাল সাইক্লোন হিট পোটেনশিয়াল এনার্জি কিছু না কিছু রয়েছে। শুধু মাত্র দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরের সামান্য কিছু যায়গায় ট্রপিক্যাল সাইক্লোন হিট পোটেনশিয়াল এনার্জি কম রয়েছে। এস এস টি ক্রমশ বাড়তে থাকার জন্য উইণ্ড শেয়ার আগামী দিনে কমতে থাকার জন্য ও বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য ও সবচেয়ে বড়ো কথা আসন্ন দিনে বঙ্গোপসাগরে এম জে ও সক্রিয় হতে চলায় ট্রপিক্যাল সাইক্লোন হিট পোটেনশিয়াল এনার্জি মে মাসে আরো বাড়বে।
সর্বশেষ ও এল আর, ম্যাডেন জুলিয়ান অশিলেশন, কেলভিন ও ইকুইটোরিয়াল রসবি কম্বাইন্ড ফোরকাস্ট চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে মে মাসের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে অর্থাৎ ৬ থেকে ১৪ মে ২০২৩ এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের অনুকূল পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছে। মে মাসের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ও এল আর কমে যাচ্ছে সেই সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে এম জে ও সক্রিয় হচ্ছে। এর পাশাপাশি মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ইকুইটোরিয়াল রসবি ওয়েভ বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় হচ্ছে। এম জে ও বঙ্গোপসাগরের জন্য অনুকূল হবে মে মাসের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে। মে মাসের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী সিস্টেম তৈরির সম্ভাবনা পাওয়া যাচ্ছে। সিস্টেমটি বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণাঞ্চল থেকে সৃষ্টির সম্ভাবনা এখনো পর্যন্ত বেশি।
এবার দেখে নেওয়া যাক পরিসংখ্যান অনুযায়ী মে মাসের তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ কোন দিকে থাকে?
২০০১ থেকে ২০২০ সালের সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা ট্রেণ্ড অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত অঞ্চল হলো দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগর। দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগর থেকেই বড়ো বড়ো ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রদত্ত তিনটি ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ দেখানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ঘূর্ণিঝড় ফনি ও ঘূর্ণিঝড় মহাসেন। দেখা যাচ্ছে তিনটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে ওড়িশা, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে। মে মাসে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে টার্গেট জোনে থাকে ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ। এবারেও হয়তো ওই পথেই এগোবে ঘূর্ণিঝড়।
প্রদত্ত প্রতিবেদন থেকে উঠে আসছে বঙ্গোপসাগরে প্রাক মৌসুমী ঘূর্ণিঝড় সিজেন শুরু হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা, উইণ্ড শেয়ার সহ বেশ কিছু প্যারামিটারস চেক করে বলা যায় বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। মে মাসে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়া ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ থাকে ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশের দিকে। মে মাসের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে এম জে ও সক্রিয় হতে চলেছে বঙ্গোপসাগরে। একেবারে প্রাথমিক সুত্র অনুযায়ী মাসের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে বঙ্গোপসাগর ঘূর্ণিঝড় জন্ম দিতে পারে।
২৪ এপ্রিল ২০২৩
No comments:
Post a Comment