নিজস্ব সংবাদদাতা: আস্তে আস্তে পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে বঙ্গোপসাগরে ক্রমশঃ শক্তি অর্জন করে চলেছে বঙ্গোপসাগর। এপ্রিলের শেষে এসে দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে সেই সঙ্গে নিরক্ষীয় ভারত মহাসাগরে সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা যথেষ্ট বেশি রয়েছে। সমগ্র বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণাঞ্চলে সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা রয়েছে ৩০°সে এর উপর। যারজন্য ওই সমস্ত অঞ্চলে ক্রমশ বায়ুর চাপ কমছে এবং বায়ুমণ্ডলে উচ্চ পরিচলন হার বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের জোগান বাড়িয়ে চলেছে। উচ্চ পরিচলন হার তৈরি হবার জন্য আগামী দিনে কনডাকটিভ অ্যাকটিভিটি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণাঞ্চলে এবং উচ্চ সূর্যের তাপ পাওয়ায় বায়ুশূন্যতা তৈরি হবার জন্য উইণ্ড শেয়ার কমছে বঙ্গোপসাগরের নিম্নাঞ্চলে। যার ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের নিম্নাঞ্চলে মে মাসের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে। মে মাসের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে চলে আসবে ম্যাডেন জুলিয়ান অশিলেশন। এই ম্যাডেন জুলিয়ান অশিলেশনকে আমরা সংক্ষেপে বলে থাকি MJO. এম জে ও বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় হয় ফেজ ৩ এ অ্যাম্প্লিচিউড ১ বা ১ এর বেশি হলে। এছাড়াও ফেজ ৪ , ৫ ও ২ বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনুকূল হয়ে থাকে। এম জে ও ফেজ ২ তে অবস্থান করলে আরবসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও শ্রীলঙ্কা উপকূল থেকে সিস্টেম তৈরির সম্ভাবনা বেশি থাকে কারণ এম জে ও ফেজ ২ তে অবস্থান করলে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ পশ্চিম দিক ঘেঁষে কনডাকটিভ অ্যাকটিভিটি ও সার্কুলেশন তৈরি হয়। অন্যদিকে এম জে ও ফেজ ৩ এ অবস্থান করলে বঙ্গোপসাগরের নিম্নাঞ্চলের মধ্যাংশ থেকে সিস্টেম তৈরির সম্ভাবনা বেশি থাকে। এম জে ও ফেজ ৪-৫ এ অবস্থান করলে দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগর থেকে সিস্টেম তৈরির সম্ভাবনা বেশি থাকে। মে মাসের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে এম জে ও সক্রিয় হয়ে যাবে বঙ্গোপসাগরে। এর পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য ও ঘূর্ণিঝড়ের মিডিয়াম টু লং রেঞ্জ প্রেডিকশনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ইকুইটোরিয়াল ওয়েভস। এই নিরক্ষীয় অঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় ইকুইটোরিয়াল রসবি ওয়েভ সক্রিয় হতে চলেছে মে মাসের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে পশ্চিমাভিমুখী ইকুইটোরিয়াল রসবি ওয়েভের আগমন হতে চলেছে মে মাসের প্রথম ১৫ দিনে যারজন্য বলা যায় মে মাসের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে বঙ্গোপসাগরের নিম্নাঞ্চলে নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে চলেছে।যা পরবর্তীতে আরো শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। আসা করা যায় মে মাসের ৭ থেকে ২১ তারিখ এই ১৪ দিনের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এবার যদি বলা যায় মে মাসের ৭ থেকে ২১ তারিখের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ কোন দিকে থাকবে। মে মাসের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ থাকে পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশের দিকে। সুতরাং ২০২৩ সালের মে মাসে তৈরি হতে চলা ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি অঞ্চলের মধ্যে পড়ার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের।
ইতিহাসের পাতা থেকে:
দেখে নিন মে মাসের ৭ থেকে ২১ তারিখের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ ও গতিপথ কেমন থাকে?
(এক্সট্রেমলি সিভিয়ার ঘূর্ণিঝড় মে ১৯৯৭)
১৯৯৭ সালে তৈরি হওয়া মে মাসের ১৪ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছিল বাংলাদেশের চট্টগ্রামে।
ক্যাটেগরি ১ ঘূর্ণিঝড় মে ১৯৯৮
১৯৯৮ সালের মে মাসের ৭ থেকে ২১ তারিখের মধ্যে আছড়ে পড়েছিল বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ক্যাটেগরি ১ ঘূর্ণিঝড়।
(সিভিয়ার ঘূর্ণিঝড় আকাশ)
২০০৭ সালের ১৩ থেকে ১৫ মে এর মধ্যে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে আঘাত হানে সিভিয়ার ঘূর্ণিঝড় আকাশ।
(ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় ভিয়ারু/ মহাসেন ২০১৩)
২০১৩ সালে ১০ থেকে ২০ মে এর মধ্যে বাংলাদেশের বরিশাল- চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় মহাসেন।
২০১৬ সালে ১৭ থেকে ২২ মে এর মধ্যে বাংলাদেশের বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু।
(সুপার ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মে ২০২০)
২০২০ সালের মে মাসের ১৩ থেকে ২১ তারিখের মধ্যে সৃষ্টি সুপার ঘূর্ণিঝড় আম্ফান গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আঘাত হেনেছিল।
২৫ এপ্রিল ২০২৩.
No comments:
Post a Comment