৩০শে জুন ২০২৩
নিজস্ব সংবাদদাতা: সমতল অঞ্চলের মানুষেরা ক্লাউডব্লাস্ট সম্পর্কে সেভাবে পরিচিত না হলেও পাহাড়ে থাকা মানুষেরা থরথর করে কাঁপতে শুরু করে ক্লাউডব্লাস্ট নাম শুনলেই। এক রাতের মধ্যে পাহাড়ের জনবসতি ধুয়ে মুছে সাফ করে দিতে পারে ক্লাউডব্লাস্ট বা মেঘফাটা বৃষ্টি। ক্লাউডব্লাস্ট ইংরেজি ভাষা যার বাংলা অর্থ হলো মেঘফাটা বৃষ্টি। সাধারণত মৌসুমী অক্ষরেখা পাহাড়ের পাদদেশে শক্তিশালী হয়ে অবস্থান করলে পার্বত্য অঞ্চলে মেঘফাটা বৃষ্টি বা ক্লাউডব্লাস্ট ও হড়পাবানের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। হিন্দি সিনেমা "কেদারনাথ" সিনেমায় হিমাচল ও উত্তরাখণ্ডে ২০১৩ সালে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ক্লাউডব্লাস্টের কল্পচিত্র তুলে ধরা হয়েছে তাতে দেখাই যায় ২৪ ঘন্টায় লাগাতার ভারী বর্ষণের কারণে নদীসমূহ ফুলে ফেঁপে উঠে পাহাড়ে থাকা ঘড়বাড়ি, প্রাণী ও উদ্ভিদ সবকিছু ধুয়ে নিয়ে নীচের দিকে অগ্রসর হতে। কেমন ভয়াবহ দুর্যোগ এই মেঘফাটা বৃষ্টি? জেনে নেওয়া যাক ওয়েদার অফ ওয়েস্টবেঙ্গলের অন্যতম আবহাওয়া বিশ্লেষক অর্ঘ্য বটব্যালের মুখ থেকে। মেঘফাটা বৃষ্টি ও হড়পাবান প্রসঙ্গে আবহাওয়া বিশ্লেষক অর্ঘ্য বটব্যাল জানান মৌসুমী অক্ষরেখা পাহাড়ের পাদদেশে শক্তিশালী হয়ে অবস্থান করলে পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে সাগর থেকে জলীয় বাষ্প ছুটে আসে যাকে বলা হয় ময়েশ্চার ইনকারশন। আর এই ময়শ্চার ইনকারশনের কারণে পাহাড়ের প্রতিবাত ঢাল বরাবর জলীয় বাষ্প পূর্ণ আদ্র বাতাস পাহাড়ের উপরে উঠতে শুরু করে এবং জন্ম দেয় সুউচ্চ কিউমুলোনিম্বাস মেঘ। এই কিউমুলোনিম্বাস মাঝেমধ্যে এতটাই উঁচু ও শক্তিশালী হয়ে উচ্চতা বিস্তার করে যার জন্য মেঘ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। একটি ক্ষুদ্র অঞ্চলে বা একটি বৃহৎ অঞ্চল জুড়ে ভারী থেকে অতিভারী ও চরমভারী বৃষ্টি ও প্রবল বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি ঘটিয়ে দেয়। সাধারণত ১০০ মিলিমিটার প্রতি ঘন্টায় বা তার বেশি গতিতে বৃষ্টি হলে তাকে ক্লাউড ব্লাস্ট আখ্যা দেওয়া হয়। এই ক্লাউড ব্লাস্ট ছোট অঞ্চলে হলে তাকে মাইক্রোব্লাস্ট ও বড়ো অঞ্চলজুড়ে হলে তাকে বলা হয় ম্যাক্রোব্লাস্ট। এই ক্লাউড ব্লাস্টের ফলে পার্বত্য অঞ্চলে তৈরি হয় ভয়াবহ হড়পাবান (A type of Surface runoff) যা পাহাড়ের কোলে থাকা জনবসতি, গাছপালা, মানুষ থেকে শুরু করে সবকিছু ভাসিয়ে দেয় স্বল্প সময়ের মধ্যে পার্বত্য ঢাল ও পার্বত্য নদীগুলোতে অস্বাভাবিক জলস্ফীতির কারণেই তৈরি হয় হড়পাবান। তিনি এও জানান বর্তমানে মৌসুমী অক্ষরেখা পাহাড়ের পাদদেশের কাছ দিয়ে অবস্থান করার জন্য প্রচুর পরিমাণে ফুটহিলস ও পার্বত্য অঞ্চলে ময়েশ্চার ইনকারশন হচ্ছে উত্তরবঙ্গ, সিকিম ও উত্তর পূর্ব ভারতে। যারজন্য ৩০শে জুন থেকে ৪ঠা জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত আগামী ৫ দিনে উত্তরবঙ্গে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি ও বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। প্রদত্ত সময়সীমার মধ্যে উত্তরবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল ও সিকিমে মেঘফাটা বৃষ্টি, ভূমিধস ও হড়পাবানের সম্ভাবনা রয়েছে।
No comments:
Post a Comment