এলনিনো বছরগুলোতে দুর্গাপূজায় বৃষ্টিহীন সুন্দর আবহাওয়া থাকে পশ্চিমবঙ্গে। কথাটা কি সত্যি ? - Weather of West Bengal

My weather, my bengal.

Saturday, July 01, 2023

এলনিনো বছরগুলোতে দুর্গাপূজায় বৃষ্টিহীন সুন্দর আবহাওয়া থাকে পশ্চিমবঙ্গে। কথাটা কি সত্যি ?

নিজস্ব সংবাদদাতা: এলনিনো বছরগুলোতে দুর্গাপূজায় রৌদ্রজ্জ্বল ও বৃষ্টিহীন সুন্দর আবহাওয়া থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এলনিনো বছরগুলোতে মৌসুমী বায়ু এমনিতেই অন্যান্য বছরের তুলনায় দুর্বল প্রকৃতির হয়ে থাকে এবং অন্যান্য বছরের তুলনায় তাড়াতাড়ি বিদায় নিয়ে নেয়। মৌসুমী বায়ু হলো আয়ন বায়ু বা বাণিজ্য বায়ুরই একটি শাখা এলনিনো প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করলে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের সমুদ্র জলতল তাপমাত্রা পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় সমুদ্র জলতল তাপমাত্রার থেকে বেশি থাকে যার প্রভাব পড়ে মৌসুমী বায়ুর উপরে মৌসুমী বায়ুর প্রবাহ এলনিনো বছরগুলোতে অন্যান্য বছরের তুলনায় দুর্বল হয়ে থাকে। মৌসুমী বায়ুর দেরি করে আগমন ও তাড়াতাড়ি বিদায়ের সম্ভাবনা বেশি থাকে। ২০১৫ সালেও এলনিনো শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল প্রশান্ত মহাসাগরে যারজন্য পশ্চিমবঙ্গের বর্ষায় প্রচুর ব্রেক পিরিয়ড চলেছিল। এবং ২০১৫ সালে সেপ্টেম্বর মাসের ৪ তারিখ থেকেই মৌসুমী বায়ু উত্তর পশ্চিম ভারত থেকে বিদায় নেওয়া শুরু করেছিল। ৪ঠা সেপ্টেম্বর থেকে ৭সেপ্টেম্বরের মধ্যে উত্তর পশ্চিম ভারতের বেশ কিছু যায়গা থেকে বিদায় নিয়ে নিয়েছিল। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ থেকে অক্টোবরের প্রথমেই বিদায় নিয়ে নিয়েছিল মৌসুমী বায়ু ২০১৫ সালে। যারজন্য ২০১৫ সালে দক্ষিণবঙ্গে দূর্গাপূজা রৌদ্রজ্জ্বল ও বৃষ্টিহীন সুন্দর আবহাওয়ার মধ্যে দিয়েই গিয়েছিল। না ছিল কোনো দূর্যোগ আর না ছিল কোনো বৃষ্টি। ১৯৯৭ সালেও অক্টোবরের প্রথমেই বিদায় নিয়ে নেয় দক্ষিণবঙ্গ থেকে বর্ষা। এলনিনো বছরগুলোতে মৌসুমী বায়ু স্বাভাবিকের চেয়ে দুর্বল প্রকৃতির হবার জন্য সূর্যের দক্ষিণায়ণের সঙ্গে সঙ্গে আই টি সি জেট অঞ্চল দক্ষিণে সিফট করতে শুরু করলেই স্বাভাবিক সময়ের আগেই পাকিস্তান ও উত্তর পশ্চিম ভারতে মৌসুমী প্রত্যাগমণকারী সিজেনাল উচ্চচাপ স্বাভাবিক সময়ের আগেই সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং উত্তর পশ্চিম ভারত থেকে খুব তাড়াতাড়ি বর্ষাবিদায় নেওয়া শুরু করে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে এলনিনো বছরগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বর্ষা সেপ্টেম্বরের প্রথম থেকে তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে উত্তর পশ্চিম ভারত থেকে বিদায় নেওয়া শুরু করেছে। খুব স্ট্রং এলনিনো বছর ২০১৫ সালে সেপ্টেম্বরের ৪-৭ তারিখের মধ্যেই উত্তর পশ্চিম ভারত থেকে বিদায় নেওয়া শুরু করেছে। এবারেও তো এলনিনো রয়েছে তাহলে এবারেও কি বর্ষা তাড়াতাড়ি পাততাড়ি গোটাতে পারে? এবিষয়ে ওয়েদার অফ ওয়েস্টবেঙ্গলের অন্যতম আবহাওয়া বিশ্লেষক অর্ঘ্য বটব্যালের মতে এলনিনো বছরগুলোতে মৌসুমী বায়ু স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম সক্রিয় থাকে তাই মৌসুমী বায়ু স্বাভাবিক সময় বা স্বাভাবিক সময়ের আগেই বিদায় নেওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ভারতের বর্ষাবিদায় শুধু মাত্র এলনিনো নির্ভরশীল তা কিন্তু নয়। ইণ্ডিয়ান ওশেন ডাইপোল বর্তমানে পজেটিভ রয়েছে যারজন্য ভারতের পশ্চিম উপকূলে ভালোই বৃষ্টি দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে ইণ্ডিয়ান ওশেন ডাইপোল পজেটিভ ও ধনাত্মক এনসো থাকার কারণে বঙ্গোপসাগর কম অ্যাকটিভ রয়েছে অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায়। বর্ষা প্রবেশের পর এখনো পর্যন্ত মাত্র একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। তবে আগামী দিনে আরো বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হবে কিন্তু পরপর নিম্নচাপের সম্ভাবনা এখনি কম রয়েছে। পজেটিভ আই ও ডি ও এল নিনোর প্রভাবে নিরক্ষরেখা বরাবর ১৮০° বিপরীত দিকে জলতল তাপমাত্রা বেশি রয়েছে এবং মধ্যভাগের বঙ্গোপসাগর ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ডাইভারজেন্স তুলনামূলক শীতল অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে যার জন্য পশ্চিম প্যাসিফিক ওশেনে পরপর টাইফুন থেকে বঙ্গোপসাগরে যে নিম্নচাপ তৈরি হয় তার সংখ্যা ২০২৩ সালের বর্ষায় কম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এবং বঙ্গোপসাগর তার সত্বেও নিজস্ব কিছু নিম্নচাপ তৈরি করতে পারে। এলনিনো ও পজেটিভ আই ও ডি থাকার কারণে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষার ব্রেক পিরিয়ড বা বিরতি বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তরবঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি রয়েছে তার কারণ মৌসুমী অক্ষরেখা বেশিরভাগ সময়েই পার্বত্য অঞ্চলে উঠে বসে থাকবে। তবে দক্ষিণবঙ্গে বিক্ষিপ্ত ভাবে প্রবল বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকবে। বৃষ্টি হবে, প্রবল বজ্রবিদ্যুৎ থাকবে তবে সেই বর্ষার টানা বৃষ্টির ফিলিংস খুব অল্প স্থানে এবং কম সময়ের জন্য থাকবে। বাড়বে ভ্যাপসা গরম। এলনিনো বছরগুলোতে বর্ষার ব্রেক পিরিয়ড বেশি থাকায় শক্তিশালী কিউমুলোনিম্বাস মেঘসঞ্চার হয়ে মাঝেমধ্যে ভয়াবহ বজ্রবিদ্যুৎ দেখা যাবে যা জীবনহানিকর হয়ে উঠতে পারে। অক্টোবর- নভেম্বর মাস থেকে ধীরে ধীরে ইণ্ডিয়ান ওশেন ডাইপোলের মাত্রা কমতে থাকলেও তা পজেটিভ থাকবে। এলনিনো শক্তিশালী হলেও ইণ্ডিয়ান ওশেন ডাইপোল পজেটিভ থাকলে সমগ্র ভারত জুড়ে ভালো বৃষ্টি হয়ে থাকে বিশেষত মধ্যভারত, পশ্চিম ভারত ও উত্তর পশ্চিম ভারতে। এলনিনো ও পজেটিভ আই ও ডি থাকলে বৃষ্টি বঞ্চিত বেশি হয়ে থাকে দক্ষিণবঙ্গ ও কলকাতা। বেশিরভাগ বৃষ্টি পশ্চিম ভারতে সিফ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে পূর্ব ভারতে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা টেনে টেনে স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। তবে বেশিরভাগ সময়ই স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হয়ে থাকে এলনিনো ও আই ও ডি পজেটিভ বছর গুলোতে। ২০২৩ সালে এলনিনো থাকলেও আই ও ডি পজেটিভ থাকার জন্য মৌসুমী বায়ু উত্তর পশ্চিম ভারত থেকে বিদায় নিতে দেরি করতে পারে। শুধু মাত্র আই ও ডি ফ্যাক্টর নয় সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের উপর নির্ভর করে বর্ষা কত তাড়াতাড়ি বিদায় নেবে বা দেরি করবে যা নির্ভর করে বঙ্গোপসাগরে এম জে ও সক্রিয় হবার উপরে। বিগত ৫-৬ বছরে দেখা গেছে বর্ষা বিদায় আটকেছে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের জন্য। এবছরে বর্ষা প্রথমে ভালো না থাকলেও সেপ্টেম্বর মাসে বর্ষা সক্রিয় হতে পারে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের প্রভাবে। সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে বর্ষা বিদায় দক্ষিণবঙ্গ থেকে স্বাভাবিক সময়েই হবার সম্ভাবনা রয়েছে। সেপ্টেম্বর - অক্টোবর মাসে উল্লেখযোগ্য নিম্নচাপ সৃষ্টি না হলে বর্ষা বিদায় উত্তর পশ্চিম ভারত থেকে দেরি করলেও দক্ষিণবঙ্গ থেকে নির্ধারিত সময়ের আগে বা স্বাভাবিক সময়ে বিদায় নিয়ে নিতে পারে। তবে ২০২৩ সালে দূর্গাপূজা অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে পড়েছে তাই দূর্গাপূজায় ২০২৩ সালে বর্ষা না থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। মহালয়ার সময় বা তার আগেই কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গ থেকে বর্ষা বিদায় নিয়ে নিতে পারে। তবে অক্টোবর মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পোস্ট মনসুন ঘূর্ণিঝড়ের পিকটাইম থাকছে। এই সময়ে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা থাকে। সেরকম সিস্টেম তৈরি হলে ও পশ্চিমবঙ্গের দিকে অভিমুখ হলে তখনই পুজো মাটি হতে পারে নচেৎ ২০২৩ সালের দূর্গাপূজা ঝকঝকে রৌদ্রজ্জ্বল ও বৃষ্টিহীন থাকার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। 
১লা জুলাই ২০২৩

1 comment:

  1. গত বছরও কি এল নিনো ছিল? কারন গতবছর দক্ষিণ বঙ্গে খুব কম বৃষ্টি হয়েছে।

    ReplyDelete

Weather Prediction Model

Comming Soon......