২৪শে জুলাই ২০২৩ (রাত ১০টা)
নিজস্ব সংবাদদাতা: বর্ষাকাল পড়লেও সেই লাগাতার বৃষ্টি এখনো পর্যন্ত এসে পৌঁছায়নি দক্ষিণবঙ্গে। বরং জুন -জুলাই মাসে ঘাঁটি গেড়ে বসে রয়েছে অস্বস্তিকর ঘর্মাক্ত ভ্যাপসা গুমোট গরম। নিম্নচাপ এর মধ্যেই কয়েকটি হয়েছে তবে তার সত্বেও সন্তোষজনক বৃষ্টি হয়নি দক্ষিণবঙ্গে। বরঞ্চ নিম্নচাপের প্রভাবে পূবালী বাতাসের দাপট বেড়ে যাওয়ায় শরৎকালীন আবহাওয়া ও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি ছাড়া উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি হয়নি দক্ষিণবঙ্গে। তবুও উপকূলবর্তী এলাকায় কিছুটা বৃষ্টি হলেও একেবারেই প্রায় বৃষ্টি বঞ্চিত থাকছে পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যবঙ্গের জেলাগুলি। আজ ২৪শে জুলাই ২০২৩ পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে ওড়িশা-অন্ধ্র উপকূলের অদূরে তৈরি হয়েছে নিম্নচাপ। আর এই নিম্নচাপের হাত ধরেই উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃষ্টি বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গে। নিম্নচাপ নিয়ে ওয়েদার অফ ওয়েস্টবেঙ্গলের অন্যতম আবহাওয়া বিশ্লেষক ও পূর্বাভাস প্রদানকারী অর্ঘ্য বটব্যাল কি বলছেন জেনে নেওয়া যাক। ওয়েদার অফ ওয়েস্টবেঙ্গলের অন্যতম আবহাওয়া বিশ্লেষক অর্ঘ্য বটব্যাল জানাচ্ছেন ২৪শে জুলাই ২০২৩ তারিখে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে এবং নিম্নচাপটি ক্রমশ আরো ঘনীভূত হচ্ছে। নিম্নচাপের নিম্নস্তরের বাতাসের লোয়ার লেভেল কনভারজেন্স ও আপার এয়ার ডাইভারজেন্স ভালো হচ্ছে তবে নিম্নচাপ যে অঞ্চলে রয়েছে সেই অঞ্চলে মধ্য ও উচ্চ ট্রপোস্ফিয়ারে পূবালী বাতাসের প্রবাহ থাকার জন্য নিম্নচাপের পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে মেঘমালা কিছুটা হেলে রয়েছে। তবে অনুকূল পরিবেশ ও মৌসুমী অক্ষরেখার সাপোর্ট থাকার জন্য নিম্নচাপের কোর এরিয়ার ভর্টেক্স ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে। বর্তমানে ম্যাডেন জুলিয়ান অসিলেশন বঙ্গোপসাগরে প্রভাব রাখায় সিস্টেমটি আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে আগামী ৪৮ ঘন্টায়। বর্তমানে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে ও উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে ওড়িশা ও ওড়িশা-অন্ধ্র লাগোয়া বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় উইণ্ড শেয়ার কমতে শুরু করেছে এবং শেয়ার টেন্ডেন্সি ফেভারেবল রয়েছে যারজন্য আগামী ৪৮ ঘন্টায় নিম্নচাপটি আরো ঘনীভূত হবার সম্ভাবনা রয়েছে এবং ওড়িশা উপকূল ও তৎসংলগ্ন এলাকার দিকে যত এগিয়ে আসবে তত শক্তিশালী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। সিস্টেমটি আগামী ৪৮ ঘন্টায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। ওয়েদার অফ ওয়েস্টবেঙ্গলের অন্যতম আবহাওয়া বিশ্লেষক অর্ঘ্য বটব্যাল আরো জানাচ্ছেন বিগত সিস্টেমগুলোর বেশিরভাগ সরাসরি স্থলভাগ অতিক্রম করে পশ্চিম ভারত বা উত্তর পশ্চিম ভারতের দিকে চলে যাচ্ছিল মৌসুমী অক্ষরেখা অনুসরণ করে। কিন্তু আসন্ন নিম্নচাপ চট করে পশ্চিম বা উত্তর পশ্চিম ভারতের দিকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম রয়েছে। এক্ষেত্রে দুটি পথের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। সিস্টেমটি ২৬-২৭শে জুলাই ২০২৩ এর মধ্যে ওড়িশা বা ওড়িশা-অন্ধ্র উপকূল অতিক্রম করে ওড়িশার মধ্যে দিয়ে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে এবং পরবর্তীতে বঙ্গোপসাগরে নিমজ্জিত হয়ে ফের একবার শক্তিশালী হয়ে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে ৩০শে জুলাই থেকে ২রা আগষ্ট ২০২৩ এর মধ্যে এবং পুনরায় পশ্চিম উত্তর পশ্চিম বা উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবার সম্ভাবনা রয়েছে। সিস্টেমটি দুই নম্বর পথ অনুসরণ ওড়িশা-অন্ধ্র উপকূলের সমান্তরালে এগিয়ে এসে উত্তর বঙ্গোপসাগর বা সরাসরি গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করতে পারে এবং পরবর্তীতে পশ্চিম উত্তর পশ্চিম বা উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। উত্তর ভারতের উপর বর্তমানে মিড টু আপার ট্রপোস্ফিয়ারিক হাইপ্রেসার অবস্থান করছে এর পাশাপাশি আগামী দিনে একটি শক্তিশালী পশ্চিমী ঝঞ্ঝা উত্তর পশ্চিম ভারতের উপর আসতে চলেছে। বর্তমানে থাকা হাইপ্রেসার মিড ট্রপোস্ফিয়ারিক লেভেলে ব্রড কিন্তু দুর্বল হলেও আপার ট্রপোস্ফিয়ারিক লেভেলে কিছুটা শক্তিশালী রয়েছে। এর পাশাপাশি উত্তর পশ্চিম ভারতে আসন্ন পশ্চিমী ঝঞ্ঝার অক্ষরেখা শক্তিশালী হবার জন্য সিস্টেমটি চট করে পশ্চিম বা উত্তর পশ্চিম ভারতের দিকে যেতে পারবেনা। দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান হবে নিম্নচাপের পূর্ব ভারতের উপকূলীয় ও তৎসংলগ্ন এলাকায়। বেশ অনেকদিন ধরেই থাকবে নিম্নচাপের প্রভাব। নিম্নচাপের প্রভাবে কলকাতা হাওড়া হুগলি মেদিনীপুর ২৪ পরগণা সহ দক্ষিণবঙ্গের উপকূলীয় ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ২৫শে জুলাই থেকে ৩রা আগষ্ট ২০২৩ পর্যন্ত ১০ দিন সময়সীমার মধ্যে কখনো বিক্ষিপ্ত ভাবে আবার কখনো দফায় দফায় থেকে কিছু কিছু সময় একনাগাড়ে বৃষ্টি, হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পাশাপাশি ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। উপকূলীয় জেলাগুলোতে দমকা থেকে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ওড়িশা উপকূল গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও অন্ধ্র প্রদেশ উপকূলে প্রদত্ত সময়সীমার মধ্যে উত্তাল সমুদ্র ও জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। প্রদত্ত সময়সীমার মধ্যে সমগ্র দক্ষিণবঙ্গেই বৃষ্টি ধীরে ধীরে বাড়বে এবং জুলাই মাসের শেষে ও আগষ্ট মাসের শুরুতে সমগ্র দক্ষিণবঙ্গেই ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ভারী বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলে। তবে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলায় বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার তীব্রতা অন্যান্য জেলার তুলনায় কম থাকবে। নিম্নচাপের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে হাওড়া হুগলি মেদিনীপুর ঝাড়গ্রাম দুই ২৪ পরগণা কলকাতা বাঁকুড়া নদীয়া বর্ধমান ও পুরুলিয়া জেলায়। পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ জেলায় বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া তুলনামূলক কম থাকবে অন্যান্য জেলার তুলনায়।
No comments:
Post a Comment