নিজস্ব সংবাদদাতা: প্রতিদিনের মত আবহাওয়ার পূর্বানুমান সংক্রান্ত ব্লগপোস্ট আজ নয়, বরং আজ আলোচনা করবো নভেম্বর মাসের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে হওয়া এক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আত্মজীবনী। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভের সঙ্গে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করেছিল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। ২০১৯ সালে পজেটিভ আই ও ডি থাকার কারণে আরব সাগরে ৭ টি শক্তিশালী সিস্টেম তৈরি হয়েছিল যার মধ্যে কায়ার ও মহা যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। সেই তুলনায় বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় পরিবেশ কিছুটা প্রতিকুল থাকলেও নভেম্বর মাসের শুরুতে কিছুটা অনুকূল হয়ে তৈরি করেছিল ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পটভূমি। নভেম্বর মাসের শুরুর দিকে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর থেকে প্রবেশ করেছিল আন্দামান সাগরে বিদেশি ঘূর্ণিঝড় ম্যাটমোর পালস যা পরবর্তী পর্যায়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে পরিণত হয়ে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর থেকে উত্তর পূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে ৯ নভেম্বর ২০১৯ নাগাদ ভেরি সিভিয়ার ঘূর্ণিঝড় হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ -বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের উপকূল অতিক্রমের সময় তৈরি হয়েছিল বিরাট টুইস্ট। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল যেপথে সুন্দরবন উপকূল অতিক্রম করেছিল সেখানে ভরপুর ছিল ম্যানগ্রোভ অরণ্য। বুলবুলের স্থলভাগ অতিক্রমের সময় দীর্ঘ সময় ধরে চলে বঙ্গ-বাংলার উপকূলে থাকা ম্যানগ্রোভ অরণ্যের সংঘাত। এই সংঘাতের কারণে স্থলভাগ অতিক্রমের সময় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল স্লথ হয়ে পড়ে এবং স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৩ ঘন্টা দেরী করে সুন্দরবন উপকূলে আঘাত হানে এবং ক্রমাগত শক্তি হ্রাস করতে থাকে। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য মূল ঝড়কে বুক পেতে নেয় এবং পশ্চিমবঙ্গ -বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দেয়। ম্যানগ্রোভ অরণ্য যেন প্রাচীরের মতো আটকে দেয় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে। ঘূর্ণিঝড় আটকে পড়ার জন্য ধীরে ধীরে স্থলভাগ অতিক্রম করে এবং শক্তি হ্রাস করতে থাকে দ্রুত এরপর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ১২ ঘন্টার মধ্যে আরো দুর্বল হয়ে পড়ে। সমুদ্রের তীর খালি হলে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বিধ্বংসী আকারেই আছড়ে পড়তো বঙ্গ-বাংলার উপকূলে। ম্যানগ্রোভ অরণ্য থাকায় ল্যাণ্ড ইন্টারাকশন স্থলভাগ অতিক্রম আগেই শুরু হয়েছিল অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের। যার জন্য বেঁচে যায় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ সে যাত্রায় কোনো রকমে টিকে যায়। ঝড়ের গতিও কমে যায়। ঘূর্ণিঝড়টি শেষ পর্যন্ত লড়াকু মানসিকতা নিয়ে টিকে থাকতে চাইলেও হার মানতে বাধ্য করেছিল সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল দিয়ে গিয়েছিল এক বিরাট শিক্ষা বঙ্গ-বাংলাকে ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে ম্যানগ্রোভ অরণ্য পারে আমাদের রক্ষা করতে। কিন্তু আমরা বুঝেও চোখ বুজে নির্বিচারে কেটে চলেছি ম্যানগ্রোভ অরণ্য। তৈরি হচ্ছে পর্যটন হোটেল। ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। ম্যানগ্রোভ অরণ্য শেষ হয়ে গেলে বঙ্গ-বাংলার উপকূলে আসা ঘূর্ণিঝড় গুলোকে প্রাচীরের মতো আটকাবার কেউ থাকবেনা। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় এলে উড়ে যাবে বঙ্গ-বাংলা। যেটা আম্ফানে হয়েছিল। আম্ফান যে যায়গা দিয়ে ঢুকেছিল সেখানে ম্যানগ্রোভ তেমন ছিলনা। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের। এখনও সময় আছে বাঁচাতে হবে ম্যানগ্রোভ।
৩/১১/২০২২ (রাত)
No comments:
Post a Comment